নামমাত্রই কেন্দ্রীয় প্রকল্প তা। বাংলার বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ সুনিশ্চিত করতে মোট খরচের প্রায় ৯০ শতাংশ বহন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তবে খাতায় কলমে ৯৩ লক্ষ বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগের কথা বলা হলেও, বহু ক্ষেত্রে কল থাকলেও তার মাধ্যমে এক ফোঁটাও জল পাচ্ছেন না আমজনতা। এর পিছনের আসল কারণ কী, মঙ্গলবার নবান্নে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে তা খোলসা করলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। পানীয় জলের সংযোগ দিতে ডিপিআর তৈরির আগে পরীক্ষাই করা হয়নি যে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পর্যাপ্ত জলের উৎস আদৌ আছে কি না। যাচাইয়ের কাজ না করেই কোটি কোটি টাকা খরচ করে পাইপ পেতে দিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর দ্বারা নিযুক্ত একাধিক ঠিকাদার। আর এর জেরেই আজ বাড়িতে কল থেকেও জল পাচ্ছেন না কয়েক লক্ষ মানুষ। এই সকল অসৎ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিসের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সকে (এসটিএফ) দিয়ে তদন্ত করিয়ে কড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ডিজি রাজীব কুমারকে অবিলম্বে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়ে তাঁর সাফ বার্তা, “যত বড়ই হোক না কেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না।” নবান্নে এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায়, অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিসের ডিজি সহ অন্যান্যরা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন জেলাশাসকরা। বৈঠকের শুরু থেকেই এদিন বাড়ি বাড়ি জল দেওয়ার কাজ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে রাজ্যের ১ কোটি ৭৫ লক্ষ বাড়িতে জলের সংযোগ নিশ্চিত করার সময়সীমা বেঁধে দেন তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে মুখ্যসচিব ও মন্ত্রী গোষ্ঠীর সদস্যদের তদারকির দায়িত্ব দেন মমতা।
পাশাপাশি, জলের পাইপ নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কেউ বাধা দিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “কাজে বাধা দিলে তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।” এদিন পানীয় জল অপচয় নিয়েও সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “অনেক জায়গায় বাড়ি বাড়ি জল প্রকল্পের পাইপ কেটে চারতলা বাড়ির জলের রিজার্ভারের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। আবার কোথাও এই পাইপ থেকেই চাষের জন্য জল নিয়ে নেওয়া হচ্ছে।” এই সমস্ত উদাহরণ তুলে ধরেই এর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। শুধু তাই নয়, জলের অপচয় রুখতে আরও কঠোর আইন আনা যায় কি না, তাও খতিয়ে দেখতে মুখ্যসচিব এবং ডিজিকে দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাতে এই কাজের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় ইঞ্জিনিয়ার কম আছেন। সেই কারণে এইচআরবিসি’র মতো রাজ্য সরকারি সংস্থা থেকে ইঞ্জিনিয়ার নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। প্রয়োজনে যোগ্যতা বিচার করে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করতে একটি গাইডলাইন তৈরির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে মুখ্যসচিবকে।