তাঁর মেদিনীপুরের সভায় তাঁবু ভেঙে বিপত্তি ঘটেছিল। মুখ পুড়েছিল গেরুয়া শিবিরের। ভোটের মুখে যাতে তেমন কোনও কারণে অস্বস্তিতে পড়তে না নয়, তাই এবার আর প্রধানমন্ত্রীর সভার মঞ্চ নির্মাণে কোনও খামতি রাখেনি রাজ্য বিজেপি৷ আজই ব্রিগেডে সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাই টাকার বন্যা বইয়ে দিয়ে তাঁর জন্য গড়া হয়েছে মাথা ঢাকা বিলাসবহুল মঞ্চ। একে ভোটের উত্তাপ। তার ওপর এপ্রিলের গরম। মোদী ব্রিগেডে তাই ব্যবহার করা হয়েছে ৯টি জার্মান অ্যালুমিনিয়ামের হ্যাঙ্গার। যার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করতেও কসুর করেনি বিজেপি।
শুধু তাই নয়। ঝাড়গ্রাম, লালগোলা, পুরুলিয়া ও রামপুরহাট থেকে আজ, বুধবার ভোরবেলা চারটি বিশেষ ট্রেন আসছে কলকাতায়। না সাধারণ যাত্রীরা নন, তাতে রয়েছেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। হ্যাঁ, ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের হাজির করতে ৫৩ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই চারটি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে বিজেপি! সেই সব ট্রেনে কর্মী-সমর্থকদের হাওড়া ও কলকাতা স্টেশনে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রেল সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া ও রামপুরহাট থেকে ছাড়া তিনটি ট্রেন হাওড়ায় আসবে। লালগোলা থেকে ছাড়া ট্রেনটি পৌঁছবে কলকাতা স্টেশনে। কয়েক দিন আগে বিজেপির পক্ষ থেকে দলীয় কর্মীদের কলকাতায় আনার জন্য ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড টুরিজম কর্পোরেশন বা আইআরসিটিসি-র মাধ্যমে ‘ফুল ট্যারিফ রেট’ (এফটিআর) অর্থাৎ ভাড়ার নির্দিষ্ট হার মেনে চারটি ট্রেন নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ট্রেনের সব আসনে যাত্রী থাকলে যে-ভাড়া পড়ে, তার থেকে কিছু বেশি টাকা দিতে হয়।
রেলের এক আধিকারিক জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা এবং রেলের নিয়ম মেনেই টাকা দিয়ে বিজেপির তরফে ওই চারটি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে। চারটি ট্রেনেই সাধারণ শ্রেণির কামরা থাকবে। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ওই ট্রেনগুলিই ফের নির্দিষ্ট গন্তব্যে ফিরে যাবে। পাশাপাশি, জানা গেছে, মোদীর জনসভার জন্য শিয়ালদহ ডিভিশনে ছ’জোড়া অতিরিক্ত ট্রেন চালাবে রেল।
তবে, সভায় লোক আনতে চারটি ট্রেন ভাড়া করা হলেও একটি কামরাও ভর্তি হয়নি পুরো। রাজ্য বিজেপি আগেই দাবি করেছে, মোদীর ব্রিগেড নাকি সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় ব্রিগেড হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র অন্য কথা বলছে। জানা গেছে, ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে কয়েক হাজার লোক নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ব্রিগেডে। তাই ভোর চারটের সময় ঝাড়গ্রাম থেকে হাওড়ার উদ্দেশ্যে ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু তখনও লোক হয়নি দেখে ট্রেনের সময় পরিবর্তন করা হয়।
শেষমেশ পৌনে সাতটা নাগাদ ট্রেন ছাড়লেও দেখা যায়, পুরো ভরেনি ট্রেনের একটি কামরাও। ঝাড়গ্রাম শহর বিজেপির পক্ষ থেকে একটি ৭০–৮০ জনের মিছিল ভোর চারটে নাগাদ ঝাড়গ্রাম স্টেশনে পৌঁছায়। ভোর ৬টা পর্যন্ত মেরেকেটে লোক হয় ১৫০। ট্রেনের সময় পরিবর্তনের পাশাপাশি খড়গপুর ও মেচেদায় ট্রেনটিকে দাঁড় করানো হওয়ারও পরিকল্পনা ছিল। যাতে ট্রেনটি অন্তত ভর্তি হয়।
অন্যদিকে, রেলের তরফে জানান হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে শিয়ালদহ থেকে দমদম, নৈহাটি, কল্যাণী, রানাঘাট, বারুইপুর, সোনারপুরের দিকে চলবে সেই সব ট্রেন। জানা গেছে, সমাবেশের পরে শিয়ালদহে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে বলে অনুমান করেই অতিরিক্ত ট্রেন চালানো হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে রেলকে৷ প্রশ্ন উঠছে বিজেপিকে সুবিধা দিতে নির্দিষ্ট সূচীর বাইরে অতিরিক্ত ট্রেন কেন? অভিযোগ, রেলকে নিজেদের প্রচারে কাজে লাগাচ্ছে মোদী সরকার।