দাঙ্গা লাগানো, অশান্তি সৃষ্টি, বিরোধীদের পার্টি অফিস ভাঙচুরের পাশাপাশি কোনও ‘দু’নম্বরী’ কাজ করাও যে বিজেপির পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়, আবারও মিলল তার প্রমাণ। উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকতার চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে এক বিজেপি নেতাকে এবার গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার ভোর রাতে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
অনুতোষ বিশ্বাস নামে ওই বিজেপি নেতা পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃত ব্যক্তি এলাকায় বিজেপির সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। বিজেপির একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা গেছে। রবিবার তাঁকে বারাসত আদালতে পাঠানো হয়। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা কারা যুক্ত, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নদিয়া জেলার বগুলা এলাকার বাসিন্দা মনোজ বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি ১০ মার্চ হাবড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করে জানান, ২০১৫ সালে আপার প্রাইমারিতে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে গিয়ে এক বন্ধু মারফত হাবড়ার ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা, পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুতোষ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁকে আশ্বস্ত করে অনুতোষ বলেন যে, চাকরি পাওয়া নিয়ে কোনও চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু সেইজন্য কিছু টাকা খরচ করতে হবে। আর তা হলেই নিশ্চিতভাবে চাকরি হয়ে যাবে।
বেকার ওই যুবক অনুতোষের কথা সরল মনে বিশ্বাস করে অনুতোষের বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে অনুতোষের কথার ওপর ভিত্তি করে আরও দুই চাকরিপ্রার্থী বন্ধুকে জোগাড় করে মোট ৬ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা অনুতোষের হাতে তুলে দেন। তার আগে অনুতোষের কথা মতো দরিদ্র পরিবারের ওই যুবক ধারদেনা করে অনেক কষ্টে ৬ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা জোগাড় করে সেই টাকা অনুতোষের হাতে তুলে দেন বলে ওই যুবকের দাবি।
যদিও ফল প্রকাশের পর যথারীতি ওই যুবকেদের কারও নামই তালিকায় ওঠেনি। আর তখনই তাঁরা বুঝতে পারেন, তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। এই অবস্থায় প্রতারিত যুবক মনোজ বিশ্বাস অনুতোষের বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরত চাইলে তাঁকে একের পর এক তারিখ দিয়ে যান অনুতোষ। অভিযোগ, এর পরেও টাকা ফেরত না পাওয়ায় ফের যোগাযোগ করা হলে অনুতোষ ওই যুবককে হুমকি দিয়ে বলেন যে, এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বললে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। পরিস্থিতি বিচার করে অবশেষে তিনি হাবড়া থানার দ্বারস্থ হন।
প্রতারিত যুবকের আরও অভিযোগ, তাঁর মতো একাধিক বেকার যুবক-যুবতীর সঙ্গে একইভাবে চাকরি দেওয়ার নাম করে অনুতোষ প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা প্রতারণা করেছেন। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকে অবশ্য এলাকাছাড়া হয়ে যান অনুতোষ। নিয়ম মেনে পুলিশ নোটিশ পাঠায়। কিন্তু তার কোনও সদুত্তর না মেলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার ভোর রাতে হাবড়া থানার মছলন্দপুরের নাংলার বিল এলাকার একটি গোপন ডেরা থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। ভোটের মুখে উত্তর ২৪ পরগণার এই বিজেপি নেতার গ্রেফতারিতে স্বাভাবিক ভাবেই বেজায় অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।