নন্দীগ্রামের মাটি থেকেই উত্থান ঘটেছিল তৃৃণমূলের। ৩৪ বছর ধরে চলা বামেদের অপশাসনকে উৎখাতের বীজ নিহিত ছিল সেখানেই। তাই জমি আন্দোলনের ‘আঁতুড়ঘর’ নন্দীগ্রামকে প্রণাম জানিয়েই ভোট প্রচারে নেমেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এবার নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকায় ভোট প্রচারে অন্যতম ইস্যু এলাকার বন্ধ হয়ে যাওয়া রেল প্রকল্প। তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারে বদল হলেই নন্দীগ্রামে হবে রেল প্রকল্প। সম্প্রতি জেলার বাজকুলে প্রশাসনিক সভাতে এসে এই বার্তা দিয়ে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। আর এখন ভোটবেলায় দলনেত্রীর সেই বার্তাকে প্রচারে এলাকার মানুষের কাছে তুলে ধরছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামে প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাবের জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে আন্দোলনে নেমেছিলেন স্থানীয়রা। জমি আন্দোলনের জন্য পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। ২০১০ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় নন্দীগ্রামে রেল প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। নন্দীগ্রামে রেললাইনের জন্য জমিদাতা পারিবারের সদস্যদের চাকরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। প্রকল্পের শিলান্যাসের পর জমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্পের রূপায়ণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজও শুরু হয়েছিল। ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রস্তাবিত এই রেলপথের জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় জমিদাতাদের একাংশকে ক্ষতিপূরণও দেওয়ার পাশাপাশি লাইন পাতা, স্টেশন ও আবাসন নির্মাণ কাজও চলছিল।
কিন্তু ইউপিএ জমানায় রেলমন্ত্রক তৃণমূলের ‘হাতছাড়া’ হওয়ার পর থেকেই নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্পের কাজ ঢিমে তালে চলতে থাকে। আর বিগত ৫ বছর মোদীর শাসনকালে তা একেবারে বিশ বাঁও জলে চলে যায়। এর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, ‘কেন্দ্রের মোদী সরকার চক্রান্ত করে নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। বাজকুল(দেশপ্রাণ) থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত রেললাইন জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরা সেই কাজ রুখে দিয়েছে। সংসদের ভিতর ও বাইরে বহুবার নন্দীগ্রামে রেল প্রকল্পের থমকে থাকা কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছে তৃণমূল। তবে কেন্দ্র তাতে কানই দেয়নি।’
এরপরই দিব্যেন্দু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘নন্দীগ্রাম থেকে দেশপ্রাণ পর্যন্ত অসম্পূর্ণ রেল প্রকল্প শেষ করার দাবি নিয়ে আগামী দিনে কাজ করার সুযোগ চাইব।’ তাঁর কথায়, ‘মনে রাখতে হবে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না চাইলে নন্দীগ্রামে এই রেল প্রকল্প ঘোষণাই হত না। তাঁর একান্ত উদ্যোগেই এই প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছিল। তাই নন্দীগ্রামের বন্ধ রেল প্রকল্প নিয়ে আমরা এবার মানুষের কাছে সত্যিটা তুলে ধরব।’