হুগলী কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জেলা নেতৃত্বের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন ‘বহিরাগত’ লকেট চট্টোপাধ্যায়। প্রথমে তাঁর প্রার্থী হওয়ায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন রাজ্য সহ সভাপতি রাজকমল পাঠক। আর তারপর ভোটে কাজ না করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন আর এক সহ সভাপতি রাজকুমারী কেশরী। তবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এবার দলীয় কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হতে হল লকেটকে৷ জানা গেছে, ব্যান্ডেলের যে বাড়িতে তিনি আপাতত রয়েছেন, শুক্রবারের বার বেলায় সেখানেই হাজির হন একদল বিজেপি কর্মী। ঘরে ঢুকেই টেলিভিশন, কম্পিউটার ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ৷ ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে, তাঁরাও আক্রান্ত হন৷
প্রসঙ্গত, হুগলীর প্রার্থী হওয়ার পর থেকে ব্যান্ডেলের লিচুবাগানে এক দলীয় কর্মীর বাড়িতেই থাকছেন লকেট৷ শুক্রবার সকাল থেকে প্রচারে বেরিয়ে চুঁচুড়া পুরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘোরার কথা ছিল লকেটের৷ সেইমতো এদিন সকাল ৯টা নাগাদ কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বেরোন৷ ৭ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত ওলাইচণ্ডীতলার মন্দিরে পুজো দিয়ে শুরু করেন প্রচার৷ ৮ নং ওয়ার্ড এলাকায় পৌঁছতেই বাঁধে গন্ডগোল৷ অভিযোগ, ওই এলাকায় তারকা প্রার্থীলকেট চট্টোপাধ্যায়কে বেশি ঘোরানো হয়৷ যার ফলে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন৷ এদিকে রোদও চড়া হতে থাকে৷ লকেট চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি আর ঘুরবেন না৷ বাড়ি ফিরবেন৷
জানা গেছে, এতেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ৩ এবং ৪ নং ওয়ার্ড এলাকার বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা৷ কেন তাঁদের এলাকায় এলেন না দলীয় প্রার্থী? এই প্রশ্ন তুলে তাঁরা প্রথমে বিক্ষোভ দেখান৷ এরপর তাঁদেরই একাংশ সোজা পৌঁছে যান লিচুবাগানে ওই কর্মীর বাড়িতে, যেখানে লকেট আপাতত রয়েছেন৷ অভিযোগ, সোজা তাঁর ঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালায় ওই হামলাকারীরা৷ ভেঙে ফেলা হয় ঘরের টেলিভিশন, কম্পিউটারও৷ সেইসঙ্গে চলে প্রার্থীর উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য৷ তবে একটা সময়ের পর হামলাকারীরা নিজেরাই সেখান থেকে চম্পট দেয় বলে জানা গেছে।
লকেট অনুগামীদের অভিযোগ, যারা হামলা চালিয়েছে তারা সকলে হুগলীর বিজেপি সভাপতি সুবীর নাগের অনুগামী৷ তাঁর ইন্ধনেই বিজেপি প্রার্থীর উপর এমন নিন্দনীয় হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা৷ এমনিতেই দক্ষ হাতে সংগঠন চালানোর পুরস্কার হিসেবে হুগলী কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে টিকিট পাবেন বলে অনেক আশা করেছিলেন জেলা সভাপতি সুবীর নাগ৷ কিন্তু তাঁর বদলে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে লকেটেকে৷ তাতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল শুরু থেকেই৷ শুক্রবার লকেটের বাড়িতে হামলা তাঁর সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে৷
প্রসঙ্গত, আগেও একবার মগরা ও একাধিক মন্ডলের যুব নেতারা দলীয় প্রার্থী লকেটের সামনে প্রকাশ্যেই সুবীর নাগের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছিলেন। যা নিয়ে সেই সয় তুমুল হই-হট্টগোলও হয়েছিল দলীয় কার্যালয়ে। এসব কারণেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর বহুদিন কেটে গেলেও নমো নমো করে দু-একটি কর্মসূচি সেরে এসে সকাল থেকে পার্টি অফিসে বসে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুনতে শুনতেই দিনের অধিকাংশ সময় কেটে যাচ্ছিল লকেটের। আর এবারের ঘটনায় হুগলী নদীর তীরে আরও প্রকট হয়ে উঠেল পদ্মশিবিরের ভাঙন।