২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগেও ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ অবতারে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেবার দেশে আচ্ছে দিন আনার স্বপ্ন, ‘বিকাশ’-এর স্বপ্ন ফেরি করেই দিল্লীর কুর্সিতে বসেছিলেন তিনি। দেশবাসীর কাছে তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু’কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরীর। বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে এনে গরিব মানুষের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে আদতে সেসবই ছিল এক একটা জুমলা।
দেশে ফের শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচন। দিল্লী কার দখলে থাকবে? সে প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে সময়ের গর্ভে। আপাতত ভোট প্রচারে ব্যস্ত শাসক থেকে বিরোধী সব পক্ষই। গতবারের মতোই প্রচারে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এবার শুধু স্বপ্ন ফেরিই নয়, গত পাঁচ বছরে তাঁর সরকার কী কী কাজ করেছে, জনগণের সামনে তুলে ধরছেন তিনি। কিন্তু এই পাঁচ বছরে তাঁর সরকারের জনগণের জন্য যে যে কাজ করার দাবি তুলেছে বা যে সাফল্যের খতিয়ান দিয়েছে, তাঁর অধিকাংশই মিথ্যে! ‘ফ্যাক্টচেকার ডট ইন’ নামে এক সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এসেছে সেই তথ্য।
সংস্থাটি জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে মোদী নিজে বা তাঁর তরফে পিএমও কিংবা বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা যে সাফল্যের খতিয়ান দিয়েছেন, সেগুলির ওপর ভিত্তি করেই এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। তাতে জানা গেছে, বিজেপি সরকারের সময়ের দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান, কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রকল্প– প্রভৃতি ক্ষেত্রে মোদীর করা একাধিক দাবির সঙ্গে আসল তথ্যের ফারাক রয়েছে অনেকটাই। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে সেই তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। সবমিলিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর করা মোট ৪৩টি সাফল্য মিথ্যে।
যেমন, মোদী বলেছিলেন, গত দু’বছরে ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। অথচ দেখা গেছে, ২০১৪ সালের মে মাস থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১০১.৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মোদীর দাবি থেকে যা ২১.৮ শতাংশ কম। আবার মোদীর দাবি ছিল, দেশে ১.৫ কোটি টাকা টার্নওভার রয়েছে যে সংস্থাগুলির তাঁদের ক্ষেত্রে জিএসটিতে মাত্র ১ শতাংশ কর ধার্য করা হয়েছে। গোটা বিশ্বে কেবল ভারতেই এটা রয়েছে। সত্যি হল, শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বহু দেশ ছোট ব্যবসায়ীদের এই সুবিধা প্রদান করে থাকে। কিছু কিছু দেশে আবার কর মকুবও করা হয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি সরকারের দাবি ছিল, তাঁদের সরকারের আমলে দেশের ৯৫ শতাংশ গ্রামের পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছেছে। অথচ তার আগের ৬৭ বছরে মাত্র ৭০ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছেছিল। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে বিজেপির ক্ষমতায় আসার আগেই ৯৭ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ হয়ে গিয়েছিল। কেবল ১৮,৪৫২ অর্থাৎ ৩ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছানো বাকি ছিল।
তবে, মোদী সরকারের আমলে এখনও এমন অনেক পরিবার রয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার তালিকায় যাঁদের নাম থাকলেও, আদতে তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। একই ভাবে শৌচালয় তৈরি কিংবা বিগত সরকার কিংবা বর্তমান সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একইভাবে ভুয়ো তথ্য প্রদান করা হয়েছে। যা সামনে এসেছে ওই সমীক্ষায়। এভাবে মোট ৪৩টি মিথ্যে উঠে এসেছে ওই সমীক্ষায়, যেগুলিকে সাফল্য বলে চালাতে চেয়েছিলেন মোদী।