প্রতিবেদন : এবার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি বা এনপিটি(Nuclear Weapons Treaty) থেকে বেরিয়ে আসার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল ইরান। সোমবার এমনই জানিয়েছেন সে দেশের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ইসমাইল বঘাই। তিনি জানিয়েছেন, ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ইরানের পার্লামেন্টে একটি বিল পেশ করা হবে। ইতিমধ্যেই সেই বিল তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে একই সঙ্গে তেহরান জানিয়েছে, ধ্বংসের জন্য অস্ত্র বানানোর বিরোধিতা চালিয়ে যাবে তারা। চুক্তি থেকে বেরোলে পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ কিংবা অন্য দেশের কাছ থেকে পরমাণু অস্ত্র নেওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধ্যবাধকতা থাকবে না ইরানের।
Read More: পর্যটকের রেকর্ডিংয়ে খুনের কয়েকঘন্টা আগের ছবি প্রকাশ্যে, কী করছিল সোনম!
এনপিটি চুক্তি(Nuclear Weapons Treaty) অনুযায়ী, পরমাণু শক্তিধর কোনও দেশ অন্য কোনও দেশকে পারমাণবিক অস্ত্র তো বটেই, এই প্রযুক্তিও তুলে দিতে পারে না। পরমাণু শক্তিধর নয়, এমন দেশগুলি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করা এবং অন্য কারও কাছ থেকে না নেওয়ার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। ষাটের দশকের শেষে যখন এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে, তখন মাত্র পাঁচটি দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। দেশগুলি হল আমেরিকা, রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন), ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং চিন। পরে অবশ্য পরমাণু অস্ত্রধর হয়ে ওঠে বিশ্বের একাধিক দেশ।

এখনও পর্যন্ত ১৯১টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। তবে ঘোষিত পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও এনপিটিতে স্বাক্ষর করেনি ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া, ইজরায়েল। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, চিন এবং আমেরিকা। চুক্তির নাম ছিল ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ)। তাতে স্থির হয়, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা বন্ধ রাখলে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা এবং অন্য কয়েকটি দেশ।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1934585939478868137
এই চুক্তিতে লাভবান হয়েছিল উভয় পক্ষই। কিন্তু ২০১৬ সালে প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ট্রাম্প জানান, এই পরমাণু চুক্তি ওবামার ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে আমেরিকার কোনও সুবিধা হয়নি, উল্টে লাভ হয়েছে ইরানের। ২০১৮ সালে তাঁর নির্দেশেই ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসে আমেরিকা। কিন্তু ২০২৪ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ একটি রিপোর্টে জানায়, ফের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি শুরু করেছে ইরান। এর পরেই টনক নড়ে আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলির। কিন্তু পাঁচ দফা আলোচনার পরেও এখনও ট্রাম্পের শর্ত মেনে পরমাণু চুক্তি করতে নারাজ ইরান। কয়েক দিন আগেই ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছিলেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাতে চায় না। কিন্তু পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গবেষণা চালাতে চায়। তার পরেই ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানাল তারা।