‘আপনার কাছে কোনটা অগ্রাধিকার? থালা বাজানো? মোমবাতি জ্বালানো? নাকি দেশের অর্থনীতি এবং গরিব মানুষকে বাঁচানো?’ খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই প্রশ্নগুলিই করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র।
দেশ জুড়ে লকডাউনের ৯ দিনের মাথায় শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে মোদী বলেন, ‘৫ এপ্রিল আপনাদের সকলের কাছ থেকে ৯ মিনিট সময় চেয়ে নিচ্ছি। ওই দিন রাত ৯টায় ৯ মিনিটের জন্য সকলে ঘরের আলো নিভিয়ে রাখুন। ওই সময় বাড়িতে থেকেই প্রদীপ, মোমবাতি, টর্চ জ্বালান। তাও যদি না হয়, মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালান।’ মোদীর এই বক্তব্যকে তীব্র কটাক্ষ করে প্রদেশ সভাপতি লিখেছেন, ‘আগে থেকে পরিকল্পনা না করে লক ডাউন ঘোষণা করলেন। এর আগেই আপনার আগের ভুল সিদ্ধান্তগুলো (নোটবন্দী, ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি) দেশের অর্থনীতি কে খাদের কিনারায় নিয়ে এসেছে। আপনার ভাষণে দেশের মানুষ কি ভাবে বাঁচবে তার কোনও কথা নেই। পরিযায়ী শ্রমিকদের আগেই তাঁদের বাড়ি চলে যেতে বলতে পারতেন। তাহলে আপনার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে গরিব মানুষগুলোকে বিষ দিয়ে স্নান করাতে হত না।’
সোমেন মিত্র আরও লিখেছেন, ‘আপনার কাছে এই গরিব মানুষগুলো তাঁদের বিরুদ্ধে এই অমানবিক কাজের জন্য একটু সহানুভুতি আশা করেছিল। সেই সহানুভুতি তারা পেলো না। যারা মাইলের পর মাইল হেটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে রাস্তায় মারা গেলেন তাঁদের পরিবারের উদ্দেশ্যেও কিছু বললেন না। আমরা ভেবেছিলাম আপনি অন্তত ন্যায় প্রকল্পের মত কিছু ঘোষণা করবেন যাতে গরিবমানুষের ব্যাঙ্কের খাতায় সরাসরি অর্থ পৌঁছত। তাও করলেন না। হু-র পরামর্শ মত আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার পর্যাপ্ত পরীক্ষা কোথায় হচ্ছে? তার জন্য পরিকাঠামো কোথায়? আপনি এই বিষয়ে কোন কথা বললেন না। চিকিৎসক এবং এর সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলির সুরক্ষার ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনি চুপ করে থাকলেন।’
মোদীকে তোপ দেগে সোমেন আরও বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু প্রায় ২০ ডলারে নেমেছে। ডিজেলের দাম কমিয়ে কৃষকের কষ্ট লাঘব করার কোন ঘোষণা আপনার ভাষণে ছিল না বলে হতাশ হয়েছি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে। এই বিষয়েও আপনি চুপ করে থাকলেন। তবে দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে আপনি যে বার্তা দিলেন, তা থেকে ভারতবাসী কি পেল? আপনি থালা বাজান আর মোমবাতি জ্বালান তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই কিন্তু দয়া করে দেশের মানুষকে দূরদর্শনের সামনে টেনে নিয়ে এসে আর নাটক করবেন না।’