এমন প্রত্যাবর্তন ভারতীয় ক্রিকেট বহুবার দেখেছে। দলের বাইরে বেশ কয়েকমাস থাকার পর ফিরে এসেই অনবদ্য লড়াই ফের দেখলো ভারত। চার টেস্ট ম্যাচে দলের বাইরে ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দলে এসে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটালেন তারকা পেসার উমেশ যাদব। গাহুঞ্জে স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিনের শেষে তাঁর নামের পাশে তিন উইকেট। শিকারের তালিকায় রয়েছেন ডিন এলগার, এডেন মার্করাম ও থেউনিস দে ব্রুইন। যে পারফরম্যান্স ভারতকে চলতি টেস্ট সিরিজে ২-০ করার পথে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
এই উমেশ যাদবই শেষ অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রাণবন্ত উইকেটেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। সফরের আগে তাঁকে নিয়ে যে উৎসাহ অধিনায়ক বিরাট কোহালি দেখিয়েছিলেন, তার যোগ্য মর্যাদা দিতে পারেননি ভারতীয় পেসার। চার টেস্টের সিরিজে শুধুমাত্র দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম একাদশে খেলেছিলেন তিনি। সে ম্যাচে হেরেছিল ভারত। পার্থে দু’ইনিংস মিলিয়ে ১৩৯ রান দিয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে দু’টি উইকেট পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য হাতে ফেরেন। মেলবোর্ন ও সিডনি টেস্টের প্রথম একাদশ থেকে তাই বাদ পড়েছিলেন। হতাশা গ্রাস করেছিল তাঁকে।
দেশে ফেরার পরে ব্যক্তিগত কোচ সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শুরু হয়েছিল ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন অভিযান। এমনকি আইপিএল-এর পরের দু’মাস একটি ম্যাচেও খেলেননি। টেস্ট দলে ফেরার মরিয়া মনোভাবই তাঁকে আবার বিরাট-বাহিনীর অন্যতম সৈনিকে পরিণত করেছে।
অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ফেরার পরের দিনই নাগপুরে বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার সিভিল লাইন্স মাঠে উমেশকে ডেকে পাঠান কোচ। দেখেন, তাঁর অ্যাকশন, কব্জির ব্যবহার ও লেংথ আগের জায়গায় নেই। সে দিন থেকে শুরু হয় নতুন ভাবে তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া। প্রত্যেক দিন এক ঘণ্টার বেশি উমেশকে অনুশীলন করাতেন না কোচ। কারণ, ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট এখন পেসারদের ওয়ার্কলোড সম্পর্কে খুবই সচেতন। সেই সময়ের মধ্যেই অ্যাকশন, বল ছাড়া, লেংথ ও কব্জির ব্যবহারের উপরে কাজ করেন সুব্রত।
প্রাক্তন ভারতীয় পেসার বলছিলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া সফরে ওর সফল না হওয়ার কারণ শর্ট বল করার প্রবণতা। উমেশ দেশে ফেরার পরে সব চেয়ে আগে কাজ করেছি লেংথ নিয়ে। একজন পেসার তখনই সফল হতে পারে, যখন ব্যাটসম্যান বুঝতে পারবে না তাঁকে সামনের পায়ে খেলবে না পিছনের পায়ে। এলগার কিন্তু সেই দ্বিধাগ্রস্ততার শিকার হয়েছে। এটাই আগে করতে পারছিল না উমেশ।’’
আর কী পরিবর্তন করেছেন ভারতীয় পেসারের বোলিংয়ে? সুব্রত জানিয়েছেন, ‘‘রান-আপ নিয়ে কাজ করেছি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এখন ও সামান্য কোণাকুণি দৌড়ে বল করতে আসে। সেটা করলে উইকেটের মধ্যে বল রাখা যায়। সুইংয়ের পরিমাণও বাড়ে।’’ যোগ করেন, ‘‘কোণাকুণি দৌড়নোর ফলে আগের চেয়ে ওর অ্যাকশন এখন সাইড-আর্ম হয়ে গিয়েছে। কব্জি সোজা থাকছে। তাই বলের সিমও বেঁকে যাচ্ছে না। হাওয়ায় বল নড়াচড়া করার পাশাপাশি পিচ থেকেও সুবিধা পেতে শুরু করেছে। এ ধরনের কিছু সামান্য পরিবর্তনই আজ এতটা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’’