অবশেষে মিটল সাত দিন ধরে রাজ্য জুড়ে চলা স্বাস্থ্য সংকট। আন্দোলন, প্রস্তাব, পাল্টা প্রস্তাব থেকে লাইভ কভারেজ। অবশেষে নবান্নে সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে গলল বরফ।
প্রসঙ্গত, এই বৈঠক নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। বৈঠকের লাইভ কভারেজ হব কি হবে না তা নিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিল অনিশ্চয়তা। তবে শেষ পর্যন্ত তাতে মুখ্যমন্ত্রী রাজি হয়ে গেলেও বৈঠক নির্দিষ্ট সময়ে শুরু করা যায়নি। কথা ছিল বৈঠক শুরু হবে বিকেল ৩টের সময়ে। দুপুর ২ টো ৪৫ মিনিট নাগাদ এনআরএস থেকে স্বাস্থ্য দফতরের বাসে চেপে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধ দল রওনা দেয়। রাজ্যের ১৪টি মেডিক্যাল কলেজের ২৮ জন প্রতিনিধি ছিলেন বাসে। নবান্নে ২৮ জন ছাড়া আরও তিন চার জন প্রতিনিধির অনুমতি দেওয়া হয়।
বিকেল ৩টে ৩০ মিনিটে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল নবান্নে পৌঁছায়। মোট ৩১ জন প্রতিনিধি। বিকেল ৪টের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী এলে শুরু হয় বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচবি মলয় দে, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। এছাড়াও প্রশাসনের পক্ষে ছিলেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। প্রশাসন-ডাক্তারদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিলেন প্রবীণ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় ও অভিজিৎ চৌধুরী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শুরুতেই জুনিয়র চিকিৎসকরা নিজেদের বক্তব্য জানান। বলেন, এই অচলাবস্থা আমরা চাই না। কিন্তু আমাদের অনেক ভয়ের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। প্রায়ই আমাদের মার খেতে হয়। দীর্ঘদিন আমার অত্যাচারিত হতে হতে আমার নিরুপায় হয়েই আন্দোলনে নেমেছি। চিকিৎসকদের গায়ে যাতে হাত তোলা না হয় তার জন্য একটা বার্তা দেওয়া দরকার। দোষীদের শাস্তি দিয়ে স্পর্ধা ভেঙে দেওয়া দরকার। ১২ দফা দাবিকে এদিন প্রস্তাব বলে তুলে ধরলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোনও জুনিয়র চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনও মামলা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘তোমরা ছোটছোট ছেলেমেয়ে, তোমার আমাদের ভবিষ্যৎ। কেন কেস করতে যাব তোমাদের বিরুদ্ধে?’ আর নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, এমারজেন্সিতে কোলাপসিবল গেট বসানো হবে। জরুরি বিভাগে রোগীর সঙ্গে দু’জনের বেশি লোক ঢুকতে পারবে না। পাশাপাশি, কোন রোগী কতটা অসুস্থ তা রোগীর আত্মীয়দের জানানোর জন্য তিন শিফটে লোক রাখা যেতে পারে। ভালো ব্যবহার করে তাঁরা রোগীর আত্মীয়দের রোগীর কন্ডিশন সম্পর্কে জানাবে।
সব হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ান হচ্ছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে কলকাতা পুলিশে এক জন নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হবে। প্রত্যেক জেলাতেও একজন নোডাল অফিসার হাসপাতালের নিরাপত্তা দেখবেন। এরপরই জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষে জানানো হয়, হাসপাতালের পরিকাঠামো ভালো না হলে আমাদের ভোগান্তি হয়। আমরা ভগবান হতে চাই না। আমাদের ভালো পরিকাঠামো চাই।
তাঁরা এ-ও বলেন, বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা অনেক সময়েই পরিস্থিতি সামলাতে পারে না। পুলিশ চিকিৎসকদের ওপরে আক্রমণ হচ্ছে দেখেও তৎপর হয় না। পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ হেন অভিযোগ শুনেই, গোটা রাজ্যের জন্য একটি জরুরিভিত্তিক নম্বর এবং ই-মেল আইডি চালু করতে ডিজি বীরেন্দ্রকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন আক্রান্ত চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে দেখতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কাছ থেকে এ রূপ প্রতিশ্রুতি পেয়েই আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন আশ্বস্ত জুনিয়র ডাক্তাররা।