ইদানীং কালে বেড়েছে চোরাশিকারীদের দৌড়াত্ম্য। ধরা পড়লে কঠোর সাজার ভয়ও নেই তাঁদের। সম্প্রতি চোরাশিকারীদের হাতে সুন্দরবনের আজমলমারির জঙ্গলে একটি বাঘের মৃত্যু হয়। ঘটনায় চোরাশিকারিদের ধরতে তাদের ডেরায় গিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বন আধিকারিক সন্তোষা জি আর–সহ বনকর্মীরা। সেখানেই চোরাশিকারিদের গ্রামে আক্রান্ত হলেন খোদ জেলার বন আধিকারিক–সহ বনকর্মীরা।
শনিবার রাতে সকলে গেছিলেন চোরাশিকারিদের ধরতে। আচমকাই সেখানে চোরাশিকারিদের পরিবারের লোকজন–সহ গোটা গ্রামের মানুষ বেরিয়ে এসে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। টাঙ্গি, লাঠি ও রড হাতে তাঁদের আক্রমণ করে। ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন বন আধিকারিক–সহ মোট ৮ জন বনকর্মী। তাঁদের ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কলকাতার বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে কয়েকজনকে।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কুলতলির মৈপীঠ কোস্টাল থানার মধ্য গুড়গুড়িয়া এলাকার মনসাতলা গ্রামে। বন আধিকারিক সন্তোষা জি আরের কপালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তাঁকে বাঁচাতে এসে আক্রান্ত হয়েছেন কুলতলি বিট অফিসার বিবেকানন্দবাবু–সহ আরও কয়েকজন বনকর্মী। বন আধিকারিকের কপালে ১০টা সেলাই পড়েছে বলে খবর। বাকিদের কারওর মাথা ফেটেছে, তো কারওর হাতে চোট লেগেছে। একজনের কোমরের মাজা লাঠি দিয়ে মেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলেও খবর।
বন দফতর সূত্রে খবর, গত ৯ এপ্রিল সুন্দরবনের আজমলমারি ১ নম্বর জঙ্গলের মধ্যে চোরাশিকারিদের পাতা ফাঁদে আটকে মৃত্যু হয় একটি বাঘের। তার পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। চোরাশিকারিদের পাতা ফাঁদে আটকেই ওই বাঘের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানা যায়। বাঘের ময়নাতদন্তের পর বন দফতর এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। আর তাতেই দু দিন পর ১১ এপ্রিল বনকর্মীদের হাতে ধরা পড়ে প্রবোধ ও সদানন্দ হালদার নামের দুই চোরাশিকারি। তাদের জেরা করে বনকর্মীরা জানতে পারেন চোরাশিকারিদের দলে মোট ৮ জন রয়েছে। এমন ৪টি চোরাশিকারির দল গোটা সুন্দরবনজুড়ে বন্যপ্রাণী মেরে চলেছে। কুলতলির এই চোরাশিকারিরা সকলেই মধ্য গুড়গুড়িয়ার বাসিন্দা। গত শুক্রবার সকালে অশোক মণ্ডল নামের একজন চোরাশিকারি ধরা পড়ে বনকর্মীদের হাতে। তাকে জেরা করেই বনকর্মীরা মনসাতলার বাসিন্দা দুজনের নাম জানতে পারেন।
তারপরেই শনিবার বাকিদের ধরতে জেলার বন আধিকারিক সন্তোষা জি আরের নেতৃত্বে কুলতলির বিট অফিসার বিবেকানন্দবাবু–সহ কয়েকজন বনকর্মী মনসাতলা গ্রামে তল্লাশি চালাতে যান। গ্রামে ঢুকে ওই দুজনকে ধরতে যেতেই গ্রামের মানুষ লাঠি ও ধারালো টাঙ্গি নিয়ে বেরিয়ে আধিকারিক–সহ বনকর্মীদের মারধর শুরু করে। আক্রমণকারীদের মধ্যে বেশিরভাগ মহিলা ছিল বলে জানা গেছে। প্রথমেই ধারালো টাঙ্গির কোপ এসে পড়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বন আধিকারিক সন্তোষা জি আরের কপালে। কপাল কেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন অন্য বনকর্মীরা।
বন দফতরের তরফে ঘটনার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে কুলতলি মৈপীঠ কোস্টাল থানাতে। রাজ্য বন্যপ্রাণ উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জয়দীপ কুণ্ডু জানান, চোরাশিকারিদের ধরতে যে অভিযান চলছে, তা আটকাতেই এই হামলা। এ থেকেই পরিষ্কার, তদন্ত ঠিকপথে এগোচ্ছে। দুষ্কৃতীরা এদিন যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে তা আরও শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। চোরাশিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।
জেলার বন আধিকারিক সন্তোষা জি আর বলেন, বাঘের মৃত্যুর ঘটনায় চোরাশিকারিদের একটা বড় চক্র কাজ করেছে। তার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালাতে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই গ্রামের মানুষের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে। চোরাশিকারিদের ধরতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে বেশ কয়েকটি চক্র রয়েছে। তারা বনের মধ্যে ফাঁদ পেতে বন্যপ্রাণীদের শিকার করে। তবে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন ওদের এই হামলাতে ভয় পেয়ে বন দফতর চুপ করে থাকবে না। এর যোগ্য জবাব খুব শীঘ্রই দেওয়া হবে।