যেন মামার বাড়ির আবদার! ইস্টারের প্রার্থনার মধ্যেই গতকাল ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে শ্রীলঙ্কার চার্চে। এবার সেই ঘটনাটিকে ইস্যুকে করেই ভারতে ভোট চাইলেন নরেন্দ্র মোদী! হ্যাঁ, দাবিটা অনেকটা এমনই যে, শ্রীলঙ্কা কাঁপল বোমায়, তাই ভোট দিন আমায়। প্রসঙ্গত, গতকাল তিনটি সভা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। প্রথমটি নিজের গড় গুজরাতের পাটানে। যেখানে দল কঠিন লড়াইয়ের মুখে। তখনও শ্রীলঙ্কার ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পুরো রিপোর্ট পাননি তিনি। কিন্তু সেখানেও পুরোদমে জাতীয়তাবাদের তাস খেলতে শুরু করেন মোদী। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে সুকৌশলে টেনে আনেন বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের কথা।
মোদীর দাবি, অভিনন্দনকে না ছাড়লে যে পাকিস্তানকে ফলভোগ করতে হবে, সেই কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আমেরিকার এক কর্তাও বলেন, মোদী ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি রেখেছেন। সেই কারণেই নাকি ভয় পেয়ে পাকিস্তান দ্বিতীয় দিনেই অভিনন্দনকে ছাড়ার কথা ঘোষণা করে। তাঁর দাবি, তা না-হলে ‘কোতলের রাত’ হত। এমনকি ভোট ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে প্রচারের ময়দান থেকেও পরমাণু অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদী বলেন, ‘পাকিস্তানের হুমকিতে ভয় পাওয়া ছেড়ে দিয়েছে ভারত। রোজ পরমাণু বোতামের কথা বলত। আমাদের কাছে তবে কী আছে? আমরা কি তা দীপাবলির জন্য বাঁচিয়ে রেখেছি?’
মোদীর পরের সভা ছিল রাজস্থানের চিতোরগড়ে। ততক্ষণে শ্রীলঙ্কার নাশকতার খবর পেয়ে গিয়েছেন তিনি। এবার তাই তিনি বললেন, “রানা প্রতাপের জমি থেকে রাজস্থানের প্রচার শুরুর পথেই শুনলাম, আমাদের পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসবাদীরা অনেক ‘বোম- ধামাকা’ করেছে। গির্জায়, হোটেলে। আজ পুরো বিশ্ব ইস্টারের পবিত্র পর্ব পালন করছে, প্রভু যিশুর শান্তির বার্তা আত্মস্থ করতে পূজাপাঠ করছে, সেই সময় নরাধম সন্ত্রাসবাদীরা শত শত নির্দোষের উপরে রক্তের খেলা খেলল। সঙ্কটের মুহূর্তে ভারত শ্রীলঙ্কার পাশে রয়েছে পুরো শক্তিতে।” হ্যাঁ, ব্যাপারটা অনেকটা এমনই যে ভারতীয়রা ভোটে জিতিয়ে মোদীকে ফের প্রধানমন্ত্রী করলে, তিনি গিয়ে শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাস রুখবেন। একে হাস্যকর বললেও কম বলা হবে।
তবে এখানেই না থেমে, এক নিঃশ্বাসে মোদী বলে চলেন, ‘ভাই ও বোনেরা, আপনারা যখন পদ্মচিহ্নে ভোট দেবেন, মনে রাখবেন, এই সন্ত্রাসবাদ খতম করার জন্য বোতাম টিপছেন আপনারা। আপনার আঙুলে শক্তি আছে। আপনি পদ্মে ভোট দেবেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমার লড়াইয়ে শক্তি আসবে। বলুন, এই সন্ত্রাসবাদ কে খতম করতে পারে?’ এরপর নিজেই একপ্রকার নিজের এ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তিনি বলেন, ‘মোদী ছাড়া আর কোনও নাম দেখছেন আপনারা? আর কেউ করতে পারে? ফলে যখন ভোট দেবেন, বীর সৈনিকের মতো সচেতন থাকা উচিত। দেশের জন্য ভোট দিলে সেই ভোট মোদীর কাছে যাবে।’
উল্লেখ্য, বিরোধীরা যতই বেকারত্ব, কৃষক দুর্দশার মতো মৌলিক বিষয় নিয়ে প্রচার করছেন, বিপদ বুঝে মোদী ততই চড়াচ্ছেন উগ্র জাতীয়তাবাদের সুর। তবে ভারতীয় সেনাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই জঘন্য রাজনীতির বিরুদ্ধে মোদীর রাজস্থানের সভার পরই সরব হন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট। তার পরেও সেনা নিয়ে কোনও রকম রাজনীতি দুঃখজনক।’ আর প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘এই চড়া জাতীয়তাবাদে মুগ্ধ হওয়ার কিছু নেই। সেনাকে সব সময় পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া রয়েছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ফের দেবে।’
কংগ্রেসের আক্রমণ যে আসবে, মোদী জানতেন। তাই বাড়মেরে তৃতীয় তথা রবিবারের শেষ সভায় ফের কংগ্রেসকে বিঁধলেন। বেশ কয়েক বার ‘পাকিস্তান’ ‘পাকিস্তান’ বলে হম্বিতম্বি করলেন। এবং অবশেষে বললেন, ‘২৩ মে যখন ফের মোদী সরকার আনবেন আপনারা, তার আওয়াজ শোনা যাবে সীমান্তপারে। সন্ত্রাসবাদকে শিক্ষা দেওয়ার পণ করেছি আমি। ঘরে ঢুকে মারি। কিন্তু কংগ্রেস বলে, শৌর্যের কথা বলা উচিত নয়। কেন? আমি কি ভজনমণ্ডলী করতে এসেছি?’ অর্থাৎ কমিশনের নির্দেশ অমান্য করেই ভোট প্রচারে ফের একবার পুলওয়ামার জঙ্গী হামলা, বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযান বা সেনাবাহিনীর কীর্তির কথা সুকৌশলে উত্থাপন করলেন মোদী। যা বিধিভঙ্গেরই সামিল।