কথা দিয়ে কথা না রাখা মোদীর বরাবরের অভ্যাস। তাঁর সৈনিকেরাও তাঁরই মতন। গত লোকসভা নির্বাচনে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন তার একটাও রাখেননি তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ তাঁর ওপরে ক্ষুব্ধ। মানুষ বলছেন এবার ভোটে বিজেপিকে ধোঁকার জবাব দেব।
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির কাছ থেকে আশ্বাসবাণী পেয়ে অকাল উৎসব শুরু হয়েছিল রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্থান কেবলসের গেটে। যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে এসেছিলেন বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু তারপরই অন্ধকার নেমে এসেছে এখানে। ভোট মিটতেই বাবুল ভুলে গেছেন সব। অতএব এবার ভোটের আগে আর কোনও উৎসব নেই। এশিয়ার এক সময়ের শ্রেষ্ঠ কেবলস কারখানার গেটে এখন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বিষাদ আর হাহাকারের সুর। কারখানার ধ্বংসাবশেষ দেখে প্রাক্তন কর্মীদের কেউ কপাল চাপড়াচ্ছেন, আবার কেউ আড়ালে চোখের জল ফেলছেন। কেউ কেউ আবার গলার শিরা ফুলিয়ে বলছেন, এবার ভোটে বিজেপিকে ধোঁকার জবাব দেব। ওদের কোনওভাবেই ক্ষমা করা যাবে না।
নিজেদের অবস্থান বাঁচাতে বিজেপি বলছে, “কারখানা বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি”। যদিও মানুষ আর তাঁদের মিথ্যা কথায় ভুলছেন না। এবার ভোটে যে আর বাবুলের ওপর আস্থা রাখবেন না , তা এলাকার বাসিন্দারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছেন। মানুষ কাজ চায়, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নয়।
কারখানার গেটে কয়েকদিন ধরে যেন ‘বাজার’ বসেছে। সেই বাজারে আড়াই টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে অফিসের আধিকারিকদের শৌখিন চেয়ার, টেবিল। যন্ত্রাংশ অনেক আগেই কারখানা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। এমনকী বিল্ডিংয়ের ইটও যে যার খুশিমতো নিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের গর্বের কেবল কারখানায় এখন চারদিকে ধ্বংসস্তূপ। দেখে কারও বোঝার উপায় নেই একসময় জেলার অভিজাত এলাকাগুলির মধ্যে ছিল এই কারখানা চত্বর। এখন কর্মীদের আবাসনগুলি ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। সেখানে এখন সমাজ বিরোধীদের অবাধ যাতায়াত বলে অভিযোগ।আর এই সবকিছুই হয়েছে বাবুল তথা বিজেপির অবহেলায়।
রুগ্ন হয়ে যাওয়া হিন্দুস্থান কেবলসে নতুন করে উৎপাদন চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত লোকসভা নির্বাচনের আগে বাজিমাত করেছিল বিজেপি। কিন্তু, কেন্দ্রে তারা ক্ষমতায় আসার পরেই ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কারখানা বন্ধের কথা ঘোষণা করা হয়। তারপরেই টেন্ডার করে কারখানার সমস্ত জিনিসপত্র বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কারখানার কর্মীরা জানাচ্ছেন, “আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে জয়ী হয়ে বাবুল সুপ্রিয় ভারী শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী হয়েছিলেন। তাঁর দপ্তরের অধীনেই ছিল হিন্দুস্থান কেবলস। তিনি নিজে এই কারখানায় উৎপাদন চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁকে বিশ্বাস করে এখানকার কর্মীরা উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছিলেন। অথচ তিনি মন্ত্রী হওয়ার পরেই এই কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি কর্মীদের স্বপ্ন দেখানোর পর ধোঁকা দিয়েছেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এখানকার মানুষ তার জবাব দেবেই”।
রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দারা বলেন, ধ্বংসস্তূপে আর কেউ খোঁজ নিতে আসে না। কোনও নতুন প্রতিশ্রুতিও শোনা যাচ্ছে না। তাই ভোটের উত্তাপও নেই। দেখা মেলে না বাবুলের। তাই এখানকার কর্মীরা বুকে আগুন চেপে রেখেই এবারের নির্বাচনে অপমানের বদলা নিতে মরিয়া। শিবসেনা প্রার্থী অভিষেক সিং বলেন, বিজেপির সংসদ সদস্য কোনও কথাই রাখেননি। হিন্দুস্থান কেবলসকে ইচ্ছা করলেই বাঁচানো যেত। কিন্তু তিনি কোনও চেষ্টাই করেননি। ধোঁকার জবাব এবার উনি পাবেন।