গতবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিজয়চন্দ্র বর্মনের কাছে ৫৯ হাজার ৯৩৮ ভোটে হেরেছিলেন তিনি। গলব্লাডারে অস্ত্রোপচার এবং বাড়ির কার্নিশ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট খানিকটা স্থবির করে দিয়েছে তাঁকে। তবে তার চেয়েও অসহায় করে দিয়েছে খোদ তাঁর দলের কর্মী সমর্থকরা। জলপাইগুড়িতে সিপিএমের ভোট যে ক্রমশই অন্য দিকে সরে যাচ্ছে, এ কথা মেনেই নিলেন জলপাইগুড়ির একসময়ের সাংসদ মহেন্দ্র রায়। জলে ডোবা মানুষের মতোই দু’হাত তুলে ডাঙা খোঁজার ভঙ্গিতে তিনি বলেন, ‘আমরা কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু কেউ কথা শুনতে চাইছেন না।’
জলপাইগুড়ি জেলার নির্বাচনী চিত্র বোঝার জন্য মহেন্দ্র রায়ের এই জবানি একমাত্র নমুনা নয়। জেলার সদর ব্লক, রাজগঞ্জ, মেখলিগঞ্জ, মালবাজার ঘুরলে একটি ছবিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে এবারের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম নয়, বিজেপিই। তবে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের রংধামালির চায়ের দোকানের মালিক তৃণমূল সমর্থক শঙ্কর দাস বিজেপিকেও ধর্তব্যের মধ্যে রাখছেন না। তিনি গর্ব করেই বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বিজেপি, সিপিএম, কেউ নেই। আমরাই সব।’ তিনি যে ভুল কিছু বলেননি, তার প্রমাণ গতবারে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট। তৃণমূল প্রার্থী বিজয়চন্দ্র বর্মন সেবার পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯০৩ ভোট৷
এবারেও প্রার্থী সেই বিজয়চন্দ্রই। নিজের জয়ের ব্যাপারে তিনি যে এতটা আত্মবিশ্বাসী, তা নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘ভোট হল এক জটিল অঙ্কের খেলা। সবাই এই অঙ্ক বুঝবেন না।’ দার্জিলিং লোকসভার মতোই জলপাইগুড়িরও ভোট চিত্র নানা রঙে রঞ্জিত। সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের লোকজনে ভরা জলপাইগুড়ির মতো প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী শহরে মালবাজারের চা বলয় যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে গ্রামাঞ্চল। গত ৮ বছরে রাজ্য সরকারের উন্নয়নের প্রভাব শিলিগুড়ির পরেই সবচেয়ে বেশি জলপাইগুড়িতে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৯ মার্চ জলপাইগুড়িতে নতুন সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন হয়। এই জেলার মাটিতেই গড়ে উঠেছে রাজ্য সরকারের শাখা সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’। পর্যটকদের জন্য তৈরি হয়েছে দুটি চমৎকার ঠিকানা। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের গজলডোবা ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প ‘ভোরের আলো’ এবং বন্যপ্রাণীর উন্মুক্ত চিড়িয়াখানা ‘বেঙ্গল সাফারি’ পার্ক। গড়ে উঠেছে স্পোর্টস কমপ্লেক্স অর্থাৎ বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন। তৈরি হয়েছে জাতীয় সড়ক, মেখলিগঞ্জ-হলদিবাড়ি সেতুও। শুধু তাই নয়, বন্ধ চা বাগান খোলার পাশাপাশি চা-বলয়ে বিকল্প আয়ের উৎস তৈরি করতেও সচেষ্ট হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পর্যটনের নতুন ঠিকানা তৈরি হওয়ায় বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
মার্বেল আর টাইলসে রাজকীয়ভাবে বাঁধানো রাজবাড়ি ঘাট। করলা নদীর পাড়ে বসানো হয়েছে নজরকাড়া বেঞ্চ। আর আলোর ফুলঝুরি। প্রতিটি রাস্তা মসৃণ। নীল-সাদা রঙে চিক চিক করছে। সেজে উঠেছে মালবাজারও। উন্নয়নের এই সাজানো বাগানেই এবারের লোকসভা নির্বাচন। আর এই উন্নয়নেই কোণঠাসা বিরোধীরা। এইসব কারণেই প্রচারে বেরিয়ে বিজয়চন্দ্রকে জনতার কাছ থেকে কোনও অভিযোগ শুনতে হচ্ছে না। তিনি বেশ স্বস্তির সঙ্গেই জানাচ্ছেন, ‘যেখানে যাচ্ছি, নানা কাজের জন্য মানুষ এসে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যাচ্ছেন। তাই জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই।’