অভিবাদন নিন যোদ্ধা। আপনার সাহস, শৌর্য ও দেশত্ববোধের জন্য। অভিবাদন নিন বীর। ‘না’ বলতে শেখানোর জন্য।
জেনেভা কনভেনশন মতে শত্রু জমিতে কোন সৈন্য ধরা পরলে বা গ্রেফতার হলে সে ঠিক তিনটে তথ্য দিতে বাধ্য। তার নাম, পদমর্যাদা আর সার্ভিস নম্বর। এর বাইরে একটা তথ্য ও তার মুখ দিয়ে বের যেন না হয়। বলতে হবে, ‘এগুলো আমার জানানোর কথা নয়।’ এটা সেনাবাহিনীতে শেখানো হয়। শৃঙ্খলাবধ্য জাওয়ানেরা সেটাই মেনে চলে। শত্রুর চোখে চোখ রেখে হিমশীতল চাহনিতে “না” বলতে পারাটাও কঠোর ট্রেনিং এর অংশ। উইং কমান্ডার অভিনন্দন একজন Decorated Officer। উনি ঠিক সেটাই করেছেন। এরজন্য উরি ছবি দেখা বা গরমাগরম বক্তৃতা শোনার দরকার পরেনি তার। দরকার ছিল ঠান্ডা মাথায় মৃত্যু মুখ থেকে বেরিয়ে আসা।
উইং কমান্ডার অভিনন্দন আমাদের দেশের মানুষ। আমাদের দেশের হয়ে কাজ করতে গিয়ে আটকে পরেছেন ওপারে। তাকে ছাড়িয়ে আনতে উথাল পাথাল করে দেওয়া হবে কূটনৈতিক মহল। চাপ সৃষ্টি করবে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, রাষ্ট্র সংঘের নিয়োজিত ভারতীয়েরা। এদের নেতৃত্ব দেন ঝানু আমলা, সেনাধক্ষ, কূটনীতিক। এক একজনের ২০-৩০বছরের উজ্জ্বল সার্ভিস রেকর্ড। প্রতিটি পদক্ষেপ এদের জানা৷ এদের কোন পাঁচ বছর
অন্তর বদলে যাওয়া যে মন্ত্রীরা তাদের থেকে শিখতে হয়না কখন কী করতে হবে ঘরের ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য৷
পাকিস্তান আর ভারতের মধ্যে প্রধান ফারাক, স্বাধীনতার পরে যখন আমরা আইআইটি, আইআইএম এইমস, ইসরো বানাচ্ছিলাম, ওরা বানাছিল সন্ত্রাসী তৈরির মাদ্রাসা। জেহাদ ক্যাম্প, জেহাদিদের ঠাঁই দেওয়ার ব্যবস্থাকে রাষ্ট্র প্রাধান্য দিলো। তাতে যা হওয়ার তাই হলো। গোটা অর্থনীতি ভেঙে পড়লো। নিজেরা ও নিজেদের তৈরি ফ্রাংকেনস্টাইনের হাতে মরতে শুরু করলো। মনে পরে ২০০জন স্কুল পড়ুয়ার লাশ?
ইমরান খান বারবার শান্তি শান্তি অকারণে করছে না। ওদের মতো শান্তির ছেলের দেশ খুব কম আছে। বসতে বললে, শুয়ে পরবে। ৭১’এ তাই করেছিল। ইমরান নিজে ও জানে, দেশের অবস্থা ভালো না। তেল নেই, খাদ্য নেই। যুদ্ধ বিমান ও কম। নৌবাহিনী ভারতের চেয়ে দুর্বল। উপরন্তু আমেরিকার হাত আছে ভারতের মাথায়। সব দিক ভেবে দেখলে সাদা পতাকা উড়িয়ে দেওয়াই ঠিক হবে। ধমকে চমকে শেষ মেশ কমান্ডার অভিনন্দনকে ছেড়েই দিতে হবে। কূটনীতি তাই বলে। ইংরেজিতে বলে,Pressure Politics। এর সাথে ঘন ঘন বিদেশ সফরের সুফল বা বুকের সাইজের কোন সম্পর্ক নেই৷
উইং কমান্ডার অভিনন্দন এর রক্তাক্ত চেহারার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে ভারতের মনোবল তলানিতে আনতে চেয়েছিল পাকিস্তান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও দেখিয়ে ভালো সাজতে চেয়েছিল৷ কিন্তু পোড়খাওয়া অফিসারের যে ছোটবেলা থেকেই হিমশীতল আর লোহার মতো শক্ত হওয়ার ট্রেইনিং পাওয়া। যে সরকারই থাকুক ক্ষমতায়, তাকে এটাই করতে হতো। চোয়াল শক্ত করে বলতে হত, ‘এগুলো আমার জানানোর কথা নয়।’
তাকে কোন রাজনৈতিক নেতা বলে দেন নি, ভারতীয়সেনার গুরুত্বপূর্ণ নথি, কাগজপত্র গিলে ফেলতে বা জলে চুবিয়ে নষ্ট করে দিতে। তিনি নিজে সেটা করেছিলেন ধরা পরে যাওয়ার আগে৷ এটাই দেশত্ববোধ। কার ফ্রিজে কি আছে, কে কখন জাতীয় সংগীত চলাকালীন বসে ছিল, সেটা লাঠি নিয়ে নজর রাখা দেশত্ববোধ নয়৷
দেশত্ববোধ বোধহয় শত্রুর চোখে চোখ রেখে সত্যিটা বলা। রাষ্ট্রের যেটা ভুল সেটা মুখের উপর বলা৷ দেশত্ববোধ বোধহয় এটাই দাবী করে। গোপনে শত্রুকে মুচলেকা দিয়ে বীর সাজা নয়।
রাষ্ট্র যখন আপনি ফ্রিজে কি রাখছেন, কার সাথে কথা বলছেন, কোন বই পড়ছেন, কাকে ভোট দিচ্ছেন, কোথায় গিয়ে প্রার্থনা করছেন, কোন মাংস কাটছেন, কেন সমালোচনা করছেন জানতে চাইবে, অভিনন্দনের মতো শান্ত ভাবে বলুন ‘এগুলো আমার জানানোর কথা নয়।’
এরপর ঘরের ছেলে সত্যি ঘরে আসবে। কূটনীতিক জয় হবে। কিন্তু নাগিনীরা চারি দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস। দিকে দিকে আবীর নিয়ে রাস্তায় নেমে আসবে ফেসবুক যোদ্ধারা, স্লোগান দেবে রাষ্ট্রনায়কের নামে, ভোট প্রচারে উল্লেখ হবে এ বীরগাঁথা। নির্বাচন বৈতরণি পার করাবে যুদ্ধ বিমান। তখন উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে অভিবাদন দিন। “না” বলতে শিখিয়েছে বলে।
ওদের উদবাহু নৃত্য, ওদের ছাতির ইঞ্চি মাপা, ওদের সেনাবাহিনীর জন্য মেকি অহমিকা, দ্বেষের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যেই হাত জোর করে অভিনন্দনের গল্প শোনাতে যাবে, চায়ে চুমুক দিতে দিতে নবারুণ ভট্টাচার্য আউড়ান।
“আয় মোরা সব গরীব যত,বাঁধব জবর জোট।
একসুরে আয় বলব তেড়ে, ভোটমারানি ফোট্।”
উইং কমান্ডার অভিনন্দন, অভিবাদন নিন।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)