দিনটা মঙ্গলবার। সময় ভোর সাড়ে তিনটে। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় হওয়া জঙ্গী হামলার ঠিক বারো দিনের মাথায় পাকিস্তানকে বুঝতে না দিয়েই ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে ফেলে এল হাজার কেজির বোমা। যাতে ছারখার ৩০০ জঙ্গী-সহ জইশের একাধিক লঞ্চপ্যাড, কন্ট্রোল রুম। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে মঙ্গলবার সকালে এই খবর জানানোর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে অভিযানের কয়েকটি ভিডিও। যার মধ্যে একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, অন্ধকারের মধ্যেই কোনও যুদ্ধবিমান থেকে আগুনের মালা ছড়িয়ে পড়ছে। সঙ্গে মন্তব্য, ‘ভারতীয় বায়ুসেনা দিওয়ালি পালন করল।’ এবং হ্যাশট্যাগ সার্জিকাল স্ট্রাইক-২।
শুধু তাই নয়, কয়েকটি খবরের চ্যানেলেও ভিডিওটি দেখানো হয়েছে ‘পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিতে বায়ুসেনার বিমান হানা’ বলে। প্রায় একই শিরোনামে ভিডিয়োটি ইউটিউবে আপলোডও করা হয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হল, পাকিস্তানের তরফেও এ দিন একই ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে পাকিস্তানের নাগরিকদের একাংশ দাবি করেছেন, ‘ভারতের ব্যর্থ বিমানহানার পরে মুজফফরাবাদ ও নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া এলাকায় পাক বায়ুসেনার তৎপরতা।’ কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন, এটা মুজফফরাবাদ নয়, ইসলামাবাদের ভিডিও। তাঁদের আরও দাবি, এটা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মহড়া। তবে এই ভিডিওর গায়ে কোনও দেশেরই সরকারি ছাপ নেই। অর্থাৎ, কোনও দেশই সরকারি ভাবে এই ভিডিও প্রকাশ করেনি।
তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই ভিডিওর সূত্র তা হলে কী? ফুটেজটি রাতারাতি এলই বা কোথা থেকে? সংবাদমাধ্যমের একাংশ এর সত্যতা পরীক্ষা করেছে। তারা গুগলে বিষয়টি নিয়ে খোঁজও চালিয়েছিল। খোঁজখবর নিয়ে অবশেষে দেখা গেছে, মহম্মদ জোহাইব নামে এক ব্যক্তি ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এমনই একটি ভিডিও আপলোড করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি সেখানে দাবি করেছিলেন, এটি ওই সময়ে রাতে ইসলামাবাদে পাক বায়ুসেনার মহড়ার দৃশ্য। জোহাইবের দাবি ঠিক হোক বা ভুল, ভিডিওটি যে দু’বছরের বেশি পুরনো, এর থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এটা জানার পরে সংবাদমাধ্যমের ওই অংশ জানিয়ে দেয়, মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারত ও পাকিস্তানের লোকজন ওই ভিডিওটি দেখিয়ে যে দাবি ও পাল্টা দাবি করছিলেন, তা ঠিক নয়।
আবার আরও একটি ভিডিও গতকাল সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দিনের আলোয় পরপর ক্ষেপণাস্ত্র মেরে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু ঘাঁটি। যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিওটি আপলোড করেছেন তাঁদের দাবি, ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযানের ঘটনার ভিডিও এটি। এরপরই গুগলে এই নিয়ে খোঁজ করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশ দেখেছে, ওই ভিডিওটি আসলে একটি ভিডিও গেমের অংশ মাত্র। আসলে গতকালের পর থেকে এমনই একাধিক ভুয়ো ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যেগুলিকে ভারতীয় বায়ুসেনার বালাকোট অভিযানের ভিডিও বলেই চালানোর চেষ্টা করছে নেটিজেনদের একাংশ।