বকখালি ঘুরতে যাওয়া এতদিন বেশ ঝঞ্ঝাটে পরিপূর্ণ ছিল। কলকাতা থেকে আসতে হত হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর তীরে, সেখান থেকে ভেসেলে নদী পেরিয়ে তবে যাওয়া যেত সমুদ্রসৈকতে। গতবছরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন জুড়ে যাবে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া সেতু। অবশেষে শেষ হল সেই কাজ। জুড়ে গেল নামখানার হাতানিয়া–দোয়ানিয়া নদীর ওপর সেতু।
সংযোগকারী রাস্তা নিয়ে এই সেতুর দৈর্ঘ্য সাড়ে ৩ কিলোমিটার। এই সেতুটি সুন্দরবনের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু হতে চলেছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে সেতুটি সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এর ফলে রাজ্যের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ, জম্বুদ্বীপ ও হেনরি আইল্যান্ডে সরাসরি চলে যাওয়া যাবে। সুন্দরবনের পর্যটনকেন্দ্রগুলির গুরুত্ব বাড়বে। পর্যটনের প্রসারে রাজ্য সরকারও বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে ২২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতু নির্মাণ হয়েছে। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে তৈরি হয়েছে এই সেতু। এখন থেকে সপ্তাহ শেষে কাছেপিঠের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বকখালিকে বেছেও নেওয়া যেতেই পারে।
নামখানা ব্লকের চাষিদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই সেতু। কিন্তু হাতানিয়া–দোয়ানিয়া নদী আন্তর্জাতিক জলপথ হওয়ায় সেতুর নকশা তৈরিতে বিলম্ব হয়। পরে বিম ছাড়াই দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে এই সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘২০১৫ সালে এই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে লাগাতার কাজ চলেছে। সেতু জুড়ে গিয়েছে। নিরাপত্তার জন্য কিছু কাজ বাকি আছে।
একনজরে এই দেখলে এই সেতুকে মনে হবে দ্বিতীয় হুগলী সেতুর সংস্করণ। এই ব্রিজ গড়তে সবথকে বেশি উদ্যোগ নিয়েছিলেন মমতা। বস্তুত হাতানিয়া-দোয়ানিয়া সেতু মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রোজেক্ট। সেতুর দায়িত্বে থাকা এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বি কে সিং বলেন, “সম্পূর্ণ অন্য ধরণের প্রযুক্তিতে এই সেতু গড়া হয়েছে। অনেকটা উঁচু করতে হয়েছে যাতে জাহাজ চলাচলে কোনও বাধা তৈরি না হয়”।
এই সেতুর ফলে ফলে নামখানায় এসে আর জেটিতে উঠতে হবে না। সরাসরি চলে যাওয়া যাবে বাংলার অনিন্দ্যসুন্দর পর্যটন ক্ষেত্র বকখালিতে। যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রেও সুন্দর যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি হবে এই সেতুটি। বলতে গেলে দিঘার পর সৌন্দর্যের দিক থেকে দ্বিতীয় সমুদ্রসৈকতের রূপ নেবে এই পর্যটন ক্ষেত্র।