সুন্দরবনে একটা নতুন দিনের শুরু। নদীতে জাল ফেলেছেন মৎস্যজীবিরা। কেউ ভাবতেই পারেননি এমন ঘটনা ঘটবে কেউ আঁচ করতে পারেননি। আচমকাই থরথর করে কেঁপে উঠল আস্ত নৌকাটা। মুখ ঘুরিয়ে কিছু বোঝার আগেই মানুষগুলোর উপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে গেল। একটা হলুদ ডোরাকাটা প্রাণী নিমেষে লণ্ডভণ্ড করে দিল গোটা নৌকাটাকে। সম্বিত ফিরে মৎস্যজীবীরা দেখলেন তাঁদেরই এক সঙ্গী রক্তাক্ত ভাসছে নদীর জলে।
রবিবার ভোরে গোসাবা ব্লকের কালিচরা এলাকায় বাঘের হানায় মৃত্যু হয়েছে সনাতন সর্দার নামে এক মৎস্যজীবীর আহত আরো দুই জন। মোল্লাখালির বাসিন্দা বাষট্টি বছরের সনাতন ডাকাবুকো প্রকৃতির মানুষ, দু’জন সঙ্গী নিয়ে গত শুক্রবার নৌকা ভাসিয়েছিলেন নদীতে কাঁকড়া ধরার জন্য। বাড়ি ফেরার কথা ছিল কয়েকদিনের মধ্যেই। তাঁর দুই সঙ্গী জানিয়েছেন, এ দিন ভোরে গড়াল নদীপথে বাড়ির রাস্তা ধরেছিলেন তাঁরা। আচমকাই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে নৌকায় হামলা চালায় বাঘ।
ঘাপটি মেরে হয়তো কয়েকদিন ধরেই নৌকার উপর নজর রেখে চলেছিল বাঘটা। এমনই ধারণা মৎস্যজীবীদের। বাঘেদের গতিবিধি তাঁদের বিলক্ষণ জানা। কখন চুপিসাড়ে জলে নেমে নৌকার দিকে এগিয়ে এসে এক লাফে নৌকায় উঠে থাবার ঘায়ে ধরাশায়ী করে সনাতনকে। বিপদ বুঝে বাকিরা যখন লাঠি নিয়ে তেড়ে এসেছেন, বাঘের চোখ তখনও বাকি দু’জনের দিকে। দু’দিক থেকে লাঠি নিয়ে বাঘের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন মৎস্যজীবীরা। বাঘে-মানুষে লড়াই চলে প্রায় আধ ঘণ্টা। শেষে ক্লান্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দেয় বাঘ।
সনাতনের দেহটা নৌকায় তুলে মোল্লাখালি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সোমবার মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন গোসাবা কেন্দ্রের বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর। তিনি বলেছেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। মৃতের পরিবার যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায় সেটা আমরা চেষ্টা করছি।’’ আহত দু’জনের চিকিৎসা চলছে।