পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের ওপর তর্জন-গর্জন চালাচ্ছে মোদী সরকার। কেড়ে নেওয়া হয়েছে মোস্ট ফেভারিট নেশনের তকমা। বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে তিনটি নদীর জল। গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে আসছে গা-গরম করা সব মন্তব্য। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে, এসবই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই করা হচ্ছে। এর বাস্তব উপযোগিতা বা মূল্য বিশেষ নেই।
যেমন পুলওয়ামা কাণ্ডের পর মোদী স্বয়ং বলেছিলেন, দেশে সেনাদের রক্ত টগবগ করে ফুটছে। বড় মূল্য দিতে হবে পাকিস্তানকে। অথচ তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ প্রয়োজন’। প্রশ্ন উঠছে, এক সপ্তাহের মধ্যেই ‘জোশ’ কমে এল কেন ?
কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, কয়েকদিন আগে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ফোন করেন ভারতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে। ফোনেই ‘যথেষ্ট কড়া ভাবে’ সাউথ ব্লককে জানিয়ে দেওয়া হয় যে একতরফা সংঘাতের মনোভাব না নিতে। যা করার, আমেরিকার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে করতে ডোভালকে পরামর্শ দেন বোল্টন। এমন কূটনৈতিক মন্থর প্রক্রিয়া ভোটের রাজনীতিতে লাভজনক নয়। তাই পাক-নীতির প্রশ্নে ‘গরম’ সংলাপ আমদানি করতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে।
আবার কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী নিতীন গাডকড়ী বলেছেন, ‘পাকিস্তানকে আমরা জল দেওয়া বন্ধ করে দেব’। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটাও ভোটের দিকে তাকিয়ে দেওয়া ‘জুমলা’ মাত্র। আসলে এই কথা বলে পাঞ্জাব-সহ কিছু রাজ্যে ভোটে ফায়দা তোলার কথা ভাবছে রাজ্য। কিন্তু এটা অবাস্তব। কারণ, বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে জলচুক্তি হয়েছিল। একতরফা ভাবে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এলে ভারতকে বিশ্বব্যাঙ্ককে জবাবদিহি করতে হবে। যে কথা বলছে পাকিস্তানও। তাছাড়া, উচ্চ অববাহিকায় অবস্থিত ভারত যদি পাকিস্তানকে জল বন্ধ করে দেয়, তা হলে এর পর চীন ব্রহ্মপুত্রের জল বন্ধ করলে ভারতের বলার কিছু থাকবে না। ভারত সিন্ধু জলচুক্তি থেকে বেরিয়ে এলে জম্মু ও কাশ্মীরে বন্যার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত ধাক্কা খাবে নয়াদিল্লীই।
জলসম্পদমন্ত্রীর এই হুমকি নিয়ে প্রশ্ন করা সত্ত্বেও তাই মুখ খুলতে চায়নি বিদেশ মন্ত্রক। বিরোধীদের বক্তব্য, ‘এ যে নেহাতই ফাঁকা আওয়াজ, তা প্রমাণিত। উরি হামলার পরেও ঠিক একই কথা বলেছিল কেন্দ্র। কিন্তু কাজ হয়নি কোনও। এবারও ভোটের আগে ‘জুমলা’ ছাড়ছে, যা প্রকারন্তরে ফাঁকা আওয়াজেই পর্যবসিত হবে।