রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে নিজের মেয়েকে ‘অপহরণের’ গল্প ফেঁদে গ্রেফতার হয়েছিলেন বিজেপি নেতা সুপ্রভাত বটব্যাল। তিনদিনের মধ্যে অন্তর্ধান রহস্যের কিনারার পর যে ঘটনা সামনে এল, তাতে চক্ষু চড়ক গাছ হওয়ার জোগাড়। পুলিশ জানিয়েছে, এই অপহরণের ঘটনা পুর্ব পরিকল্পিত ও সাজানো। রীতিমতো পরিকল্পনা করে মেয়েকে অপহরণ করা হয়। এই অপহরণের পিছনে রাজনীতির গন্ধ রয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ। সোমবার ধৃত বিজেপি নেতা, অপহৃত তরুণীর বাবা সুপ্রভাত বটব্যাল এবং আরও দুই অভিযুক্তকে বোলপুর আদালতে তোলা হলে, আদালত চত্বরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। শেষমেশ বিচারক ধৃত বিজেপি নেতার ১১ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন এবং বাকি দু’জনের টিআই প্যারেডের নির্দেশ দেন। এ ছাড়াও অপহৃতা তরুণীকে হোমে পাঠানোরও নির্দেশ দেন তিনি।
দুপুর আড়াইটা নাগাদ বোলপুরের মহকুমা পুলিস আধিকারিক অভিষেক রায়ের নেতৃত্বে কড়া নিরাপত্তায় অভিযুক্ত বাবা ও তার দুই শাগরেদকে আদলতে আনা হয়। র্যাফ পুলিশে এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। একাধিক থানার পুলিশকে এদিন বোলপুর আদালত চত্বরে হাজির করানো হয়।
অন্য দিকে অপহৃতা তরুণীকে বাড়ি ফেরানোর জন্য এক আইনজীবী আবেদন করলেও, মেয়েটি বাড়ি ফিরতে রাজি হয়নি। তাই তাকে হোমের রাখার নির্দেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি ফিরোজ আলি বলেন, “অভিযুক্তদের আজ আদালতে তোলা হয়েছিল এবং অপহৃতাকেও হাজির করানো হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত বিজেপি নেতার ১৫ দিনের পুলিশি হেফাজত চাওয়া হয়। কিন্তু বিচারক ১১ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। অপহৃতার গোপন জবানবন্দি নিয়ে তাকে সিউড়ি হোমে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
বিজেপি নেতার এই কান্ডে রাজ্যজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সোমবারও বিষয়টি নিয়ে সরগরম জেলার রাজনীতি। লাভপুরের বিজেপি নেতার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এদিন লাভপুর ব্লকের চৌহাট্টা, থিবা সহ ন’টি পঞ্চায়েতে শান্তি মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস। ফুল্লরাতলায় মহামেলার উদ্বোধন হবে মঙ্গলবার, তাই এদিন লাভপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েতে এদিন মিছিল হয়নি। ব্লক নেতৃত্বর দাবি, বুধবার ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে মিছিল হবে। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিতে এই মেলাতেও সর্বধর্মের মানুষকে হাজির করিয়ে বিজেপিকে বার্তা দিতে চাইছে তৃণমূল। তৃণমূল ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের ন’টি পঞ্চায়েতে এদিন মিছিল হয়েছে। মেলার জন্য লাভপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েতে মিছিল করা হয়নি বুধবার ব্লক নেতৃত্বের ডাকে লাভপুরে শান্তিমিছিল হবে।
জানা গেছে, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই বিজেপি নেতা এই পরিকল্পনা করেন। দার্জিলিংয়ের নকশালবাড়ির বাসিন্দা দুই যুবককে দিয়ে পরিকল্পনা করিয়ে এই ‘অপহরণ’ সংঘটিত করা হয়। পুলিশ তদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানতে পেরেছে, ঘটনার আগের দিন দুই যুবকের সঙ্গে কথা হয় সুপ্রভাত বটব্যালের। পুলিশের দাবি, তখনই পরিকল্পনা কষা হয় অপহরণের। ওই দুই যুবক পরিকল্পনা মতোই কপালে বন্দুক দেখিয়ে বিজেপি নেতার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর দুই যুবক ওই মহিলাকে নিয়ে চলে যায় সোজা ডালখোলা। সেখান থেকেই তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ।