সম্প্রতি রাফাল কাণ্ড নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। এর মধ্যেই এবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর অ্যাসল্ট রাইফেল কেনা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিল ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি। এই সংস্থাটি খোদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে থাকা একটি সংস্থা। কিন্তু তাদেরই কপালে জুটল না মন্ত্রকের বরাত। কারণ সেই বরাত পেয়েছে এক মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা সংস্থা। বৃহস্পতিবারই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, মার্কিন রাইফেল প্রস্তুতকারী সংস্থা সিগ সুয়্যারের থেকে ৭০০ কোটি টাকা খরচ করে ৭২ হাজার ৪০০টি অ্যাসল্ট রাইফেল কেনার চুক্তি সই করেছে সেনাবাহিনী।
এরপরই শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির জেনারেল ম্যানেজার দিলীপকুমার মহাপাত্র বলেন, ‘উরি হামলার পর আমরা সেনার প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে ৭.৬২x৫১ এমএম অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরি করেছি। সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিদর্শক দল এসে শেষবার ২০১৭ সালে দেখেও যান। তার পর ওরা আর আসেননি। বর্তমানে ফাস্ট-ট্র্যাক প্রোকিওরমেন্টের মাধ্যমে ওই একই বৈশিষ্ট্যের বন্দুক আমেরিকা থেকে কিনছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।’
যদিও ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির দাবিকে কার্যত খণ্ডন করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক কর্নেল আমন আনন্দ বলেন, ‘ভারতীয় সীমারেখায় কর্তব্যরত সেনাবাহিনীর কর্মীদের কার্যক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ পরিপূরণ করার উদ্দেশ্যেই এই অ্যাসল্ট রাইফেল কেনা হচ্ছে। স্থানীয় ভাবে যে অস্ত্রগুলি পাওয়া যাচ্ছিল, তা সেনার প্রয়োজন অনুসারে পাশ না-করাতেই এই সিদ্ধান্ত।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরি হামলার পর, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অস্ত্রসজ্জা আধুনিক করার ব্যাপারে পদক্ষেপ করে সরকার। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়, বর্তমানে সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত ইনসাস রাইফেল বদলে ফেলে ‘শ্যুট টু কিল’ বা এক গুলিতেই হত্যা করা যেতে পারে এমন প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেওয়া হবে সেনার হাতে। খোঁজ শুরু হয় আধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেলের।
সেনার তালিকায় ছিল তিন রাইফেল। প্রথম, ৭.৬২x৫১ এমএম কার্তুজ ছুড়তে পারে এমন রাইফেল। এছাড়াও লাইট মেশিনগান এবং কার্বাইন। সেনাবাহিনীর কথা মাথায় রেখে ৩ কেজি ৮০০ গ্রামের ৭.৬২x৫১ এমএম অ্যাসল্ট রাইফেল প্রস্তুত করে রাইফেল ফ্যাক্টরি ইছাপুর। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি তৈরি হওয়া সেই রাইফেল অন্তত বার ছয়েক সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিদর্শক দল এসে পরীক্ষা করেও যায় বলে রাইফেল ফ্যাক্টরি সূত্রে জানানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, রাইফেল ফ্যাক্টরি ইছাপুরের তৈরি রাইফেলের আনুমানিক দাম ৮০ হাজারের কাছাকাছি হলেও, মার্কিন ওই সংস্থা থেকে রাইফেল প্রতি প্রায় ১ লক্ষ টাকা দাম দিচ্ছে সরকার। ‘আমাদের ফ্যাক্টরি সেনাবাহিনীর অস্ত্র তৈরির জন্যই তৈরি হয়েছিল। ইনসাস রাইফেল আমাদের তৈরি করা। কিন্তু সেনা আমাদের থেকে কিছু কেনে না এখন আর,’ আক্ষেপ মহাপাত্রর।
ততদিনে অবশ্য সিদ্ধান্ত সামান্য বদলে সেনাবাহিনী ঠিক করে, ফ্রন্টলাইনে থাকা সেনাদের হাতেই কেবল তুলে দেওয়া হবে আধুনিক ৭.৬২x৫১ এমএম অ্যাসল্ট রাইফেল। বাকিদের জন্য কেনা হবে ৭.৬২x৩৯ ক্যালিবারের তুলনামূলক কম ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যাসল্ট রাইফেল। বৃহস্পতিবারই সাড়ে সাত লক্ষ কালাশনিকভ (একে-২০৩) রাইফেল, রাশিয়ান এক রাইফেল প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভারতে প্রস্তুতির সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শুধু ওই রাইফেল নয়, আরও কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করেছে ইছাপুরের অস্ত্র কারখানা। তার মধ্যে রয়েছে ‘একে-৪৭’ রাইফেলের ধাঁচে তৈরি অ্যাসল্ট রাইফেল ‘ঘাতক’। এ প্রসঙ্গে শুক্রবার মহাপাত্র বলেন, ‘আমাদের তৈরি হওয়া ‘ঘাতক’ রাইফেল, যা এখনও পর্যন্ত সমস্ত আধাসেনা কিনেছে, তা ওই সমান ক্ষমতাসম্পন্ন। তবে রাশিয়ান সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভারতে সাড়ে সাত লক্ষ রাইফেল প্রস্তুত হলে দেশের অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলি বরাত পাবে রাইফেলের নানা অংশ প্রস্তুত করার।’