স্বাধীনতার পর সবথেকে ভয়ানক জঙ্গী হামলা ঘটেছে বৃহস্পতিবার। বিস্ফোরণের তীব্রতায় কেঁপে উঠেছে গোটা দেশ। এক নিমেষে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২ জন জওয়ান। এই নৃশংসতা যার মাধ্যমে ঘটেছে সেই বছর কুড়ির আত্মঘাতী ফিদায়েঁ জইশ জঙ্গী আদিল দার ওরফে ওয়াকাসকে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সকলেই দেখে ফেলেছেন। হামলার পরে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে এই হামলা নিয়ে তাকে রীতিমত গর্ব করতে। বিন্দুমাত্র অনুশোচনা ছিল না তার। বরং সে বলেছে, ““কাশ্মীরে হামলার পর স্বর্গে যাবো”। সেদিনের বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে আদিলের। যদিও তার মা-বাবা মানতেই পারছেন না ছেলে এমন কাজ করতে পারে!
ছেলের এই কার্যকলাপের জন্যে জঙ্গী সম্প্রদায়কে নয়, বরং রাষ্ট্রকেই দায়ী করেছেন তার মা। তার মা ফাহমিদা জানালেন, কয়েকবছর আগে বন্ধুদের সঙ্গে স্কুল থেকে ফেরার পথে সেনাবাহিনীর হাতে বেধড়ক মার খায় আদিল। জওয়ানদের দিকে পাথর ছোড়ার অভিযোগ তুলে আমার ছেলেকে নির্মম ভাবে মারধর করে ওরা। তারপর থেকেই ওর মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ করে ছিলাম। কেমন যেন একটা একরোখা ভাব। তবে ও যে সত্যি সত্যিই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেবে এটা ভাবিনি।” তবে ছেলেকে হারানোর জন্য রাষ্ট্র এবং রাজনীতিকেই দায়ী করেছেন ফাহমিদ। তাঁর কথায়, “রাজনীতিকরা মুখে কথা বলেই সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। তাহলে আমার ছেলেটাকে মরতে হতো না”। যতই ছেলের দোষ ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করুন তিনি, ‘কার টাকরানেওয়ালা’ আদিলের জন্যেই খালি হয়েছে আরও অনেক মায়ের কোল।
পুলওয়ামা হামলার তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, সেই সময় থেকেই সক্রিয় ভাবে জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছিল আদিল। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে আচমকাই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় আদিল। নাম লেখায় জইশ-ই-মহম্মদ সংগঠনে। শুরু হয় প্রশিক্ষণ। দিন কয়েক পরে একে-৪৭ নিয়ে ওয়াকাস কমান্ডার নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মপ্রকাশ করে। গোয়েন্দাদের কথায়, গত বছর জইশের ফিদায়েঁ জঙ্গি ফারদিন আহমেদ খান্ডের মৃত্যুর পর সেই জায়গা নেয় আদিল। জোরকদমে শুরু হয় তার প্রশিক্ষণ। বছর ঘুরতেই আদিল হয়ে ওঠে দক্ষ ফিদায়েঁ জঙ্গি। সেনা কনভয়ে ঢুকে কী ভাবে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল তিন মাস ধরে।