গত বছর সেপ্টেম্বরেই বাঁধটির পরীক্ষা করে গিয়েছিল জার্মানির এক সংস্থা। তখন কোনও সমস্যাই চোখে পড়েনি তাদের। অথচ শুক্রবার দুপুরেই হুরমুড়িয়ে ভেঙে পড়ল সেই বাঁধ। যার ফলে মৃত ৪০। নিখোঁজ তিনশোরও বেশি মানুষ।
দুর্ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ পূর্ব ব্রাজিলের বেলো হরিজন্টে শহরের এক লোহা খনি সংলগ্ন এলাকায়। শুক্রবার বেলা একটা নাগাদ ভেঙে পড়ে বাঁধটি। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাতটি দেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার উদ্ধার হয় আরও দু’টি দেহ। প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ধারকারী দল শুক্রবার সারা রাত খোঁজ চালালেও লাভ হয়নি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
অন্যদিকে, জীবিত অবস্থায় ওই ৩০০ জনকে উদ্ধার করার সম্ভাবনা কম বলে মত স্থানীয় গভর্নর রোমিউ জেমা-র। নিখোঁজদের মধ্যে অন্তত দেড়শো জনই ওই খনির প্রশাসনিক দফতরের কর্মী বলে জানিয়েছে দমকল। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বাঁধটি যখন ভেঙে পড়ে, তখন খনির প্রশাসনিক ভবনটিতে অন্তত ৪২৭ জন কর্মী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এখনও অবধি ২৭৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, শনিবার প্রায় ২০০ জন উদ্ধার অভিযানে নেমেছিলেন। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৪০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মোট ৪৩ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গেছে। তাঁদের মধ্যে ২৩ জনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বাঁধটি ভেঙে পড়ায় মাটি এবং জলের স্রোত পাশের ব্রুমাডিনহো শহরের দিকে ধেয়ে আসে। ওই মাটি-জলের স্রোতের ফলে বিনষ্ট হয়েছে অনেক গাছপালা এবং চাষের জমি। পাশাপাশি জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে একটি ব্রিজ-সহ একাধিক বাড়ি। প্রায় কোমর সমান মাটি জমে গেছে ওই অঞ্চলে। হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হচ্ছে বাসিন্দাদের।
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিরক্ষা, খনি এবং পরিবেশ মন্ত্রককে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন ব্রাজিলের নয়া প্রেসিডেন্ট জৈর বোলসোনারো। মাটি কাটার সরঞ্জাম নিয়ে উদ্ধারে নেমেছেন দমকলকর্মীরা। হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ছবি তোলার জন্য ড্রোন ব্যবহারে বিরত থাকতে বলা হয়েছে সংবাদমাধ্যমকে।
মাটির মতো খনি-বর্জ্যের (‘টেলিং’-এর) ওই স্রোত আটকাতে কমপক্ষে দিন দুয়েক সময় লাগবে বলে মত ব্রাজিলের ন্যাশনাল ওয়াটার এজেন্সির। তবে এর মধ্যে তা ২২০ কিলোমিটার দূরে রেটিরো বাইক্সো জলবিদ্যুৎ বাঁধের কাছে পৌঁছে যাবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ওই খনি এবং সংলগ্ন বাঁধটি ব্রাজিলের বিখ্যাত সংস্থা ‘ভেল’-এর। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে মারিয়ানার কাছে এক খনি ধসের ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল এই সংস্থার। সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ১৯ জনের।