মকর সংক্রান্তির মাহেন্দ্রক্ষণে পুণ্যস্নান সেরে ফিরে গেছেন অনেক পুণ্যার্থীই। সাগরমেলাও সাঙ্গ হওয়ার পথে। ফলে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই শুরু হয়ে গেছে সাগরতট ও মেলার মাঠ সাফাই কাজ। গঙ্গাসাগর নির্মল রাখতে এ বছরই প্রথম ‘তীর্থ শুদ্ধায়ন’ নামে বিশেষ ট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। নিয়ােগ করা হয়েছে ৪৫০ পুরুষ ও মহিলা সাফাই কর্মীও। এবার তট ও মেলায় রাখা ছিল ১৯৬০টি ভ্যাট। সেখানেই আবর্জনা ফেলেছেন পুণ্যার্থীরা।
আবার, সেই ভ্যাটগুলি নিয়মিত পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব ছিল ই-কার্টের। এই ই-কার্ট হল ছাদবিহীন ব্যাটারি চালিত একটি যান, যা মূলত পণ্য পরিবহণের কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি গাড়িতে দু’জন করে কর্মী ছিলেন। সাগর তট ও মেলার কোথাও জঞ্জাল পড়ে থাকলে তৎক্ষণাৎ তা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। মেলায় এই প্রথম একসঙ্গে ২৮টি ই-কার্ট জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ করেছে।
লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী ফিরে যাওয়ার পর মেলা-মাঠে যত্রতত্র পড়েছিল নোংরা আবর্জনা। ছিল প্লাস্টিক, রান্না করা মাটির হাঁড়ি, খড়বিচালি, ফুল, পােড়া ধূপ। বৃহস্পতিবার মানে আজই আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে সাগরমেলা। তারপর থেকে টানা চলবে সাফাই কাজ। যতদিন না সাগর তট ও মাঠে পুরোপুরি সাফ হচ্ছে, ততদিন চলবে সাফাই।
জানা গেছে, স্থানীয় গঙ্গাসাগর গ্রাম পঞ্চায়েত ওবিডিওর মাধ্যমেই সাফাই কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। মেলা শুরুর আগে থেকেই কাজ করছেন সেই কর্মীরা। জঞ্জাল মজুত করার জন্য সাগরে ২টি অস্থায়ী কঠিন-তরল বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনাও গড়ে তোলা হয়েছে। সেখান থেকে বর্জ্যগুলি দু’ভাগে ভাগ করে নেওয়া হচ্ছে। পরে সেগুলি নষ্ট করে ফেলা হবে।
গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তি মেলা ছাড়া মহালয়া এবং মাঘী পূর্ণিমার দিনও কয়েকলক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে। গত বছর মাঘীপূর্ণিমার পর এক রিপোর্টে উঠে আসে মেলায় প্লাস্টিক ও থার্মোকল ব্যবহারের ভয়াবহ চিত্র। সেই রিপোর্ট পাওয়ারপর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন নিয়মিত বৈঠক করে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার কমানাের ওপর জোর দেয়।
খোলা মাঠে মল-মূত্র ত্যাগ না করার জন্য মেলার ক’দিনই বারবার ঘোষণা করা হয়েছে। পুণ্যস্নানের জন্য পবিত্রতা বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়। সেই আবেদনের সুফল মিলেছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সরকারের পক্ষ থেকে স্বচ্ছ ও নির্মল মেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এ বছর। মন্ত্রী বলেন, ‘প্লাস্টিক ও থার্মোকল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিকল্প হিসেবে কাগজের ঠোঙা ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’ জানা গেছে, মেলার সাফাই কাজে প্রশাসনের পাশাপাশি খুশি সকল পুণ্যার্থীরাও।