৩ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে গো-হত্যাকে কেন্দ্র করে হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিং-সহ দু’জনের। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে কীভাবে গো-হত্যা হলো সেই তদন্তের ওপরে। আর পুলিশ অফিসারের মৃত্যুকে তিনি বলেছিলেন ‘দুর্ঘটনা’।
এরপরই বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ দেশের রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা নিয়ে কড়া মন্তব্য করেন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আয়োজিত ‘কারওয়ান-এ-মুহব্বত’ নামের এক অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে তিনি একটি ভিডিও সাক্ষাতকার দেন। সেখানে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিষ সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। যারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে, তারা অবাধে ঘুরছে। আমরা সম্প্রতি দেখেছি, একটি পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর চেয়ে একটি গরুর মৃত্যু বেশী গুরুত্বপূর্ণ।’ এমন মন্তব্যের পরই হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে পড়তে হয় তাঁকে।
তবে তাতে দমে না গিয়ে শুক্রবার অন্য একটি ভিডিয়োতে নাসিরুদ্দিন ফের নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, ‘দেশজুড়ে ধর্মের নামে ঘৃণার দেওয়াল তুলে দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন, তাঁদেরই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। শিল্পীদের কণ্ঠরোধ করে রাখা হচ্ছে, সাংবাদিকরাও নির্বাক। নির্দোষদের বিনা কারণে হত্যা করা হচ্ছে।’ তাঁর কথায়, ‘যাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে তাঁদের বাড়িতে রেড পড়ছে, লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ় করে দেওয়া হচ্ছে, চুপ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
গতকাল নাসিরুদ্দিনের বক্তব্য প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কাছে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে সাংবাদিকদের কাছে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘যারা নাসিরুদ্দিন শাহর মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তারা আসলে অসহিষ্ণুতা দেখাচ্ছে। অসহিষ্ণুতা সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সর্বশেষ জিনিস। সামনে নির্বাচন রয়েছে, দেখা যাক জনগণ এবার কোন দিকে ভোট দেবে।’
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের মতে, ‘দেশে আগের থেকে এখন অসহিষ্ণুতা অনেকটাই বেড়েছে। এর সামাজিক কারণ যেমন আছে সেরকম রাজনৈতিক কারণও আছে। দেশ চালনার বিষয়টিও রয়েছে। দেশে যা ঘটছে তা আপত্তিজনক। এটা শীঘ্রই বন্ধ হওয়া উচিত। অন্যদের সহ্য করার ক্ষমতা হারানোটা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এটি চিন্তাশক্তির অভাব এবং বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা হারানোর দিককে নির্দেশ করে।’
দেশে কি অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে? এ প্রশ্নের উত্তরে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘দেশে জরুরি অবস্থা আছে নিশ্চয়। এবং তা ঘোষিত নয় সেটাও ঠিক।’ এর পাশাপাশি জিএসটি ও নোটবন্দী নিয়েও ফের সরব হন ভারতের এই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তাঁর মতে, ‘জিএসটি অত্যন্ত বাজে ভাবে কার্যকর করা হয়েছে। নোটবন্দীও কেন্দ্রের খুব খারাপ নীতি ছিল। অত্যন্ত খারাপ ফল হয়েছে।’ এর পাশাপাশি তিনি বলেন, সরকার তাঁদের পছন্দ করেননি বলেই রঘুরাম রাজন, উর্জিত প্যাটেলদের আরবিআই গভর্নরের পদ ছাড়তে হয়েছে।