তৃণমূল বরাবরই এই দাবি করে এসেছে যে, বিজেপি নেতারা বলে মেরে দেব, কেটে দেব, পুঁতে দেব, রথের চাকায় গুড়িয়ে দেব। এই অভিযোগ যে আদৌ ভুল নয়, তা রবিবারই প্রমাণ করে দিলেন বিজেপির নেতা-নেত্রীরা। ‘পুলিশকে মারলে কিছু হবে না, আমি বলছি পুলিশকে মারুন।’ গতকাল মহাম্মদবাজারের জনসভায় এমনই মন্তব্য করলেন বিজেপির বীরভূম জেলার সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডল। পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার নেত্রী অনামিকা ঘোষ হুঁশিয়ারি দেন, তৃণমূল কর্মীদের চোখ উপড়ে নেওয়ার এবং হাত ভেঙে দেওয়ার।
রবিবার বীরভূমের মহাম্মদবাজারের শ্রীকান্তপুরে একটি জনসভার আয়োজন করে বীরভূম জেলা বিজেপি। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেপির মহিলা মোর্চার সভাপতি লকেট চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়, সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডল বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার নেত্রী অনামিকা ঘোষ-সহ জেলা ও রাজ্যের অন্যান্য নেতৃত্বরা।
বক্তৃতা করতে গিয়ে কালোসোনা মণ্ডল প্রথমে শাসক দলকে আক্রমণ করলেও, পরে তাঁর আক্রমণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে বীরভূম জেলা পুলিশ। তিনি বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেখবেন খেঁজুর গাছ সহজে কিছু দেয় না, কিন্তু যখন পাশি ডাঙ আর হেসো দিয়ে চাঁচে তখন রস বেরোয়। একই রকম ভাবে পুলিশকে ভাল ভাবে বললে কথা শুনবে না, ওদের মারলে তবেই ওরা কথা শুনবে। তাই আমি বলছি, পুলিশকে মারুন। প্রশাসন কিছু করতে পারবে না।’
এই প্রসঙ্গে বীরভূমের দুবরাজপুরের এসআই অমিত চক্রবর্তী খুনের উদাহরণও দেন বিজেপির বীরভূম জেলার সাধারণ সম্পাদক। বিজেপির কাছে পুলিশের প্রাণের চেয়েও যে গরুর প্রাণের দাম বেশি, বুলন্দশহরের ঘটনায় পুলিশ অফিসার সুবোধ সিং-এর হত্যার পরই তার প্রমাণ পেয়েছিল গোটা দেশ। গতকালের জনসভায় পরোক্ষ ভাবে যেন পুলিশ খুনকেই একপ্রকার মান্যতা দিল গেরুয়া শিবির।
অন্যদিকে, ওই সভাতেই বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার সম্পাদিকা অনামিকা ঘোষ হুঁশিয়ারি দেন, তৃণমূল কর্মীদের চোখ উপড়ে নেওয়ার এবং হাত ভেঙে দেওয়ার। সভামঞ্চ থেকে তিনি তৃণমূলের কর্মীসমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি তৃণমূলের কর্মীদের বলছি, যদি কোনও তৃণমূল কর্মী বিজেপি কর্মীদের প্রতি চোখ রাঙান, তা হলে সেই চোখ আমি উপড়ে নেব। আর যদি কেউ বিজেপি কর্মীদের গায়ে হাত দেন, তা হলে সেই হাত ভেঙে দেব।’
তবে এখানেই শেষ নয়। ওই একই সভাতেই আবার প্রশাসনকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন বিজেপির রাজ্যনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি তিনি প্রয়োজনে অস্ত্র নিয়ে পরিস্থিতি মোকবিলা করারও নিদান দেন। বক্তৃতা করতে গিয়ে নাম না করে অনুব্রত মণ্ডলের সমালোচনা লকেট বলেন, ‘জেলার এক দাদা আছে যে মহিলাদের সম্মান দিতে জানে না। এই প্রশাসনকে ভেঙে দিন, গুড়িয়ে দিন। আমরা দেখেছি প্রশাসন ঠুঁটো জগন্নাথ।’
এরপরই রাজ্যজুড়ে হিংসার পরিবেশ তৈরি করতে তিনি বলেন, ‘নিজেদের বাঁচার তাগিদে ও পরিবারকে বাঁচানোর স্বার্থে সবাইকে রাস্তায় নেমে অস্ত্র ধরতে হবে। বিশেষ করে মহিলাদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।’ ফলে বিজেপির নেতা-নেত্রীদের মূল লক্ষ্য যে এখন বাংলাকে অশান্ত করে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চলা উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করা, তা বুঝতে আর বাকি নেই কারও।