শান্তিনিকেতনে গান্ধীজির সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাতের সেই মুহূর্ত এবার চাক্ষুষ করার সুযোগ পাবে গোটা দেশ। সৌজন্যে বাংলা। আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে এ বছর বাংলার ট্যাবলো অনুমোদন করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এবারের সেই ট্যাবলোর থিমই হল, শান্তিনিকেতন এবং বেলেঘাটায় গান্ধীজি। সম্প্রতি দিল্লীর পক্ষ থেকে নবান্নে চিঠি পাঠিয়ে অনুমোদনের কথা জানানো হয়েছে। জানা গেছে, এবার বাংলা-সহ ১৪টি রাজ্যকে ট্যাবলো করার অনুমোদন দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে বামফ্রন্ট সরকার ২৬ জানুয়ারির কুচকাওয়াজে আর অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে চাকা ঘোরে ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর। দীর্ঘ ১২ বছর পর ২০১২ সালে ফের বাংলার ট্যাবলো যায় দিল্লী। সেবারের থিম ছিল শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব। তার পরের বছর ২০১৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দের দেড়শো বছরের উপর ভিত্তি করে ট্যাবলো করা হয়। আবার ২০১৪ সালে বাংলার ট্যাবলোর থিম ছিল ছৌ নৃত্য, যা প্রথম স্থান অধিকার করে বাংলার মাথায় পরিয়ে দেয় সেরার শিরোপা।
ঠিক তার পরের বছর ২০১৫ সালে কন্যাশ্রী প্রকল্পকে থিম হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু কেন্দ্র কোনও কারণ ছাড়াই তা অনুমোদন না করায় সেই বছর ট্যাবলো পাঠাতে পারেনি রাজ্য। তবে ২০১৬ সালে ট্যাবলোর থিম ছিল বাংলার বাউল। বাকি রাজ্যকে পিছনে ফেলে সেবারও প্রথম স্থান লাভ করে বাংলা। এর পর ২০১৭ সালের বাংলার ট্যাবলোর থিম ছিল শারোদৎসবে ঢাকের বাদ্যি। ২০১৮ তে থিম ছিল একতাই সম্প্রীতি। তবে গত বছরও কোনও এক অজানা কারণে অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্র।
এতদিন রাজ্য সরকার নিজেদের ভাবনা থিম আকারে পাঠাত। তবে এই বছর প্রথম প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে থিমের বিষয় ঠিক করে দেওয়া হয়। গান্ধীজির জন্মের দেড়শো বছর পূর্তিতে রাজ্যে রাজ্যে গান্ধীজির ভূমিকার উপরে ট্যাবলোর থিম করতে বলা হয়। এরপরেই খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনায় ট্যাবলোর থিম তৈরি হয়। যেখানে ১৯১৫ সালের মার্চ মাসে শান্তিনিকেতনে গান্ধীজির সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ তুলে ধরার পরামর্শ দেন মমতা।
জানা গেছে, ওই দুই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তির সাক্ষাতের মুহূর্ত ফাইবারের মডেলে তৈরি করা হবে। ৪৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট চওড়া ট্রেলারের উপরে সাজানো ট্যাবলোর অগ্রভাগে ওই ফাইবারের মডেল থাকবে। মডেল দুটির পিছনে রবিঠাকুরের শান্তিনিকেতনের বাড়ি শ্যামলী’র আদলে তৈরি হবে। পরের অংশে থাকবে জাতীয় পতাকা। আবার ট্রেলারের পিছন দিকে তৈরি হবে বেলেঘাটার তৎকালীন হায়দরি মঞ্জিল, যা বর্তমানে গান্ধীভবন।
উল্লেখ্য, এই গান্ধীভবনে থেকেই দেশজুড়ে চলা দাঙ্গার বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের ১৩ আগস্ট থেকে ৭৩ ঘণ্টার অনশন করেছিলেন গান্ধীজি। কয়েকজন দাঙ্গাকারী তাঁর কাছে অস্ত্র সমপর্ণ করে। দাঙ্গাকারীরা দাঙ্গা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলে ফলের রস খেয়ে অনশন ভঙ্গ করেছিলেন গান্ধীজি। এই গোটা বিষয়টিই জীবন্ত মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে ট্যাবলোতে।
জানা গেছে, গান্ধীজি-সহ অন্য চরিত্র তুলে ধরতে ১০ জন শিল্পী ট্যাবলোতে অংশ নেবেন। মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনায় গোটা থিমটি ছবিতে এঁকে দিল্লিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে পাঠানো হয়। ২৬ জানুয়ারির জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি কমিটি আছে। সেই কমিটিই এই থিমটিকে অনুমোদন করে। অর্থাৎ এবার বিষয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ঠিক করে দিলেও, মূল থিম কী হবে, কী ধরনের ট্যাবলো হবে, তার মডেলই বা কী হবে- সব পরিকল্পনাই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর।