মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই বলে থাকেন, ‘এগিয়ে বাংলা’। তাঁর দাবি যে মোটেই ভ্রান্ত নয়, সে ইঙ্গিত মিলেছে কেন্দ্রীয় রিপোর্টেও। এবার পঞ্চায়েত পরিচালনা ও গ্রামোন্নয়নে বাংলাকেই দেশের ‘রোল মডেল’ বলল খোদ বিশ্বব্যাঙ্ক। পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত ও সংহত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে ভাবে পদক্ষেপ করেছে, তাকে স্বীকৃতি দিয়ে বাকি রাজ্যগুলিও যাতে সেই পথ অনুসরণ করে, তার সুপারিশ করেছেন ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশ্বব্যাঙ্কের প্রধান আধিকারিক (কান্ট্রি ডিরেক্টর) জুনেইদ কামাল আহমেদ খোদ।
পঞ্চায়েতের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও তার পরিচালন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্যে আইএসজিপি (ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেংদেনিং অফ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রোগ্রাম) প্রকল্প চালু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্প চালু হয় ২০১৬-র ১ জুলাই। ‘গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাতিষ্ঠানিক সশক্তিকরণ কর্মসূচি’-তে সব মিলিয়ে মোট ১৩৫০ কোটি বিনিয়োগ করবে বিশ্বব্যাঙ্ক। ২০২২ সালের মধ্যে অনুদানের পুরো অর্থ খরচ করে ফেলতে হবে পঞ্চায়েতগুলিকে।
বছরভর পঞ্চায়েতগুলি গ্রাম উন্নয়নের যে কাজ করে, সেই টাকার একটা বড় অংশই আসে ওই আইএসজিপি প্রকল্প থেকে। সেই জন্য পঞ্চায়েতগুলির উপর বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারি অর্থ সময়ে খরচ করা, সময়ে অডিট করা, টেন্ডার ডেকে কাজের বরাত-সহ বিভিন্ন শর্ত মানতে বাধ্য থাকে পঞ্চায়েতগুলি। সেই মতো তৈরি হয় পঞ্চায়েতের পারফরম্যান্স রিপোর্ট। তার ভিত্তিতেই বিশ্বব্যাঙ্ক ও অর্থ কমিশনের অনুদানের অঙ্ক স্থির হয়।
আর এই প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে বাংলায় হওয়া পঞ্চায়েতের কাজকেই দেশের আদর্শ বলে মনে করছে বিশ্বব্যাঙ্ক। এই জন্যই জুনেইদ দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিকে বাংলার পথই অনুসরণ করার সুপরামর্শ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেছেন। যাকেরাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিকেরা একপ্রকার বাংলার সাফল্য হিসেবেই দেখছেন।
পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, সারা দেশে আইএসজিপি প্রকল্পের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি দিল্লিতে একটি ত্রিপাক্ষিক পর্যালোচনা বৈঠক ডেকেছিল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব সমীরকুমার খাড়ে। সেখানে বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যের সচিবেরা হাজির ছিলেন। বিশ্বব্যাঙ্কের কান্ট্রি ডিরেক্টর জুনেইদ কামাল আহমেদও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের সামনে কামাল জানান, আইএসজি প্রকল্প রূপায়ণে দেশের আদর্শ মডেল হল পশ্চিমবঙ্গ, অন্যদেরও ওই রাজ্যকে অনুসরণ করা উচিত।
কেন্দ্রীয় সরকারের রিভিউ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আইএসজিপি প্রকল্পে রাজ্যগুলির জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, মাত্র দু’বছরের মধ্যেই সেটা অতিক্রম করে ফেলেছে বাংলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মাত্র দু’বছরের মধ্যে রাজ্য প্রায় ৪৯.৪ শতাংশ অর্থ খরচ করে ফেলেছে। যা গোটা দেশের কাছেই এক অনন্য নজির।