নৃত্যশিল্পী সুধা চন্দ্রন কাঠের পা নিয়েই মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। তিনি দেখিয়েছিলেন মনের জোর থাকলে অঙ্গ না থাকাটা কোনও প্রতিকূলতাই হতে পারেনা। সেই পথে আবারও হাঁটলেন এক মহিলা। কৃত্রিম পা নিয়েই অান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করলেন অরুণিমা সিনহা।
২০১১ সালে এক ঘটনায় তাঁর দুটি পা বাদ চলে যাওয়ার পরেও দমে যাননি তিনি। ২০১৩ সালে এভারেস্ট জয় এবং এরপরে একে একে সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বের প্রথম প্রতিবন্ধী মহিলা হিসেবে আন্টার্কটিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনশন ম্যাসিফ জয় করলেন ভারতীয় পর্বতারোহী অরুণিমা সিনহা। শুক্রবার দুপুরের দিকে তিনি ৪৮৯২ মিটারের শৃঙ্গে সফলভাবে আরোহণ করেন। তাঁর এই সাফল্যে স্বভাবতই খুশি ভারতীয় পর্বতারোহী মহল।
১৯৮৮ সালে উত্তরপ্রদেশের আম্বেদকর নগরে জন্মগ্রহণ করা অরুণিমা ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোয় পারদর্শী ছিলেন। তিনি ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের বাস্কেটবল এবং ফুটবল খেলোয়াড়ও। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ট্রেনের জেনারেল বগিতে করে সিআইএসএফে’র পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁর ব্যাগ লুট করার চেষ্টা করে। খেলোয়াড় হওয়ায় অরুণিমা নিজে সহজে দুষ্কৃতীদের ছেড়ে দিতে চাননি। দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির সময় দুষ্কৃতীরা অরুণিমাকে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। ট্রেনে কাটা পড়ে তাঁর দুটি পা।
অরুণিমা জানিয়েছিলেন, সেই অবস্থাতেই প্রায় সারাদিন লাইনের ধারে পড়ে থাকেন তিনি। পরে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীকালে এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গেলে, সরকারের পক্ষ থেকে দিল্লি এইমসে ভর্তি করে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। হাসপাতালের বিছানাতে শুয়েই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কারও দয়ায় নয়, ফের নিজের ক্ষমতাতেই প্রতিষ্ঠা পাবেন তিনি। সেই মনের জোর থেকেই এত বড় সাফল্যের অধিকারী হলেন তিনি।
এক বছরের অসহ্য যন্ত্রণাকে কাটিয়ে ২০১৪ সালে বাচেন্দ্রি পালের অনুপ্রেরণায় নিজেকে পর্বতারোহী হিসেবে তৈরি করার কাজ শুরু করেন তিনি। ২০১৩ সালের মে মাসে জয় করেন বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। কিন্তু, তিনি কোনওদিনই সেখানেই থেমে থাকতে চাননি। তাই এভারেস্টের পর তিনি বিশ্বের সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করার লক্ষ্য নিয়ে নয়া অভিযান শুরু করেন।
৩০ বছর বয়সের মধ্যে ইতিমধ্যে তাঁর আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো, ইউরোপের মাউন্ট এলব্রুস, অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট কোসিউজকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট অ্যাকানগুয়া ইতিমধ্যে জয় করে ফেলেছেন তিনি। এবার তাঁর লক্ষ্য ছিল আন্টার্কটিকার মাউন্ট ভিনসন ম্যাসিফ। শুক্রবার তাও সফলভাবে আরোহণ করতে পেরেছেন তিনি।
আন্টার্কটিকা অভিযানে যাওয়ার আগে অরুণিমা জানিয়েছিলেন, ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে যখন তাঁর সঙ্গে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল, তখন অনেকদিন এইমসের বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছিল। বারবার তাঁর মনে হয়েছিল, তিনি একজন খেলোয়াড়। একজন সাধারণ মানুষ যা ভাবতে পারে না, তাই তাঁকে করে দেখাতে হবে। তবেই তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারবেন আরও অনেকেই। আর পা নেই বলে, কেউ তাঁকে করুণার চোখে দেখবে, এটা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাই তখনই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন, বিশ্বের সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তিনি ছোঁবেনই। সেই লক্ষ্যেই তিনি এগিয়ে চলেছেন। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে আরোহণ করার পর নিজের হাত আকাশে মেলে দিয়ে তাই সকলকে বলতে চেয়েছিলেন, তিনি পেরেছেন।
অরুণিমার এই সাফল্য আবারও প্রমাণ করে দিল মনের জোর আর সাহস থাকলে আকাশকেও ছুঁয়ে দেখা যায়।