সিবিআই-আরবিআইয়ের পরে এ বার ক্ষমতা নিয়ে প্রকাশ্য কোন্দল শুরু হল রেল মন্ত্রকেও। দুটি ভূতুড়ে টুইট ঘিরে প্রকাশ্যে চলে এল সরকারের অন্দরের বিরোধ। এক দিকে প্রশাসনিক স্তরে বিবাদ চলছে। অন্য দিকে দলের ভিতরে ক্রমশ মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিজেপি সাংসদ-কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। সরব শরিক নেতারাও। সব মিলিয়ে বিরোধীদের দাবি, প্রশাসনের উপর থেকে ক্রমশ নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। আলগা হচ্ছে রাশ।
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানের কুর্সি। সরকারি নথি অনুযায়ী আগামীকাল মেয়াদ শেষ হচ্ছে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বিনী লোহানির। সূত্রের খবর, ভোট মরসুমে নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ লোহানির কর্মজীবনের মেয়াদ অন্তত এক বছর বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়।আবার রেলের একটি সূত্র বলছে, শুরু থেকেই রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানের সম্পর্ক খারাপ। তাই লোহানির মেয়াদ বৃদ্ধি চায় না রেলমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ শিবির। দু’পক্ষের টানাপড়েনের মধ্যে দু’টি টুইট সামনে আসে। যা আরও ইন্ধন জুগিয়েছে গোটা বিতর্কে।
২১ ডিসেম্বর অশ্বিনী লোহানির ছবি দেওয়া একটি অ্যাকাউন্টের টুইটে বলা হয়, ‘নতুন বছরে নতুন ইনিংস শুরু করার জন্য মুখিয়ে আছি। দীর্ঘ সময় দেশের দু’টি সর্ববৃহৎ গণপরিবহণ সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া ও ভারতীয় রেলে কাজ করার পরে আমি ৩১ ডিসেম্বর অবসর নিচ্ছি।’ এরপরেই লোহানি শিবিরের জল্পনা শুরু হয়, তাহলে কি চেয়ারম্যানের মেয়াদ বাড়াতে রাজি হলেন না প্রধানমন্ত্রী? অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ তথা দলের কোষাধ্যক্ষ রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের ইচ্ছেই কি তাহলে মেনে নিলেন মোদী? কিছু ক্ষণের মধ্যেই অবশ্য লোহানির দফতর জানিয়ে দেয়, টুইটটি ভুয়ো। গুঞ্জন থেমে যায়। কিন্তু গতকাল পৌনে বারোটা নাগাদ ফের ওই অ্যাকাউন্ট থেকে একটি টুইট পোস্ট হয়। তাতে লেখা, ‘আমার মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো ছাড়া সরকারের কাছে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই। আমার নেতৃত্বে ভারতীয় রেলের প্রভূত সংস্কার হয়েছে। যদিও এখনও অনেক কাজ বাকি। নতুন করে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছি’।
লোহানি শিবির জানায়, ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকেই ওই টুইট করা হয়েছে। তাছাড়া কর্মরত কোনও আমলা যে এ ভাষায় নিজের ঢাক পেটাবেন না তা বলাই বাহুল্য। লোহানি শিবিরের মতে, তিনি নতুন করে দায়িত্ব পান এটা রেলের কোনও শীর্ষ কর্তা চান না। তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে লোহানির রাস্তায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। লোহানি শিবিরের ধারণা, তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি হলে রেল বোর্ডের যে সদস্যেরা চেয়ারম্যানের দৌড়ে রয়েছেন, তাঁদের পক্ষে ওই কুর্সিতে বসা সম্ভব হবে না। নিজেদের আশা জিইয়ে রাখতেই লোহানির নাম কাটতে তৎপর হয়েছেন কর্তাদের একাংশ।