সারাবছরই হাজার রকম ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন তিনি। তা সে প্রশাসনের কাজই হোক বা বিদেশ থেকে লগ্নী আনার গুরুদায়িত্ব। তবে মহালয়ের পর থেকে পুজো অবধি সেই ব্যস্ততা থাকে আকাশছোঁয়া। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিবারই বেশ কয়েকটি দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি কিছু পুজোর চক্ষুদানও করে থাকেন তিনি। তাই রাজ্যের প্রতিটি পুজোকমিটিই চায়, তাদের পুজোর উদ্বোধন হোক মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই।
এবারও শহর-শহরতলি ও জেলা থেকে কয়েকশো আবেদন জমা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। জানা গেছে, তার মধ্যে ঝাড়াই-বাছাই করে ৫০টি পুজো উদ্বোধন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী শুক্রবার ৫ অক্টোবর থেকে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো দিয়ে শুরু হবে তাঁর এ বছরের পুজো পরিক্রমা। ওইদিন বিকেলে উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরে সোজা চলে যাবেন শ্রীভূমিতে। সেখানে শারদোৎসবের সূচনা করবেন তিনি। প্রসঙ্গত, গত তিন বছর ধরেই শ্রীভূমির পুজো উদ্বোধন করছেন তিনি।
কলকাতার বড় বড় হাইপ্রোফাইল দুর্গাপুজোর মধ্যে একটি শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো। বেশ কয়েকবছর ধরেই পুজোর থিমে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করে শ্রীভূমি স্পোর্টিং- এর উদ্যোক্তারা। এবারেও নতুন কিছু চমক নিয়ে হাজির হচ্ছে শ্রীভূমি। এ বছর থিম হিসেবে তাঁরা বেছে নিয়েছে সঞ্জয়লীলা বনশালীর বিতর্কিত সিনেমা ‘পদ্মাবত’-এর সেই ঐতিহাসিক সেট, অর্থাৎ চিতোরের দূর্গ। শুধু রাজস্থানী ঘরানার মণ্ডপসজ্জা নয়, আলোকসজ্জাতেও থাকবে রানি পদ্মাবতীর স্পর্শমাখা সেই রাজপ্রাসাদ। ১০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতার লোহার কাঠামো, হাতে আঁকা ছবি, প্লাইউডের মাধ্যমে গড়ে উঠছে সুফি কবি মহম্মদ জয়সীর বর্ণনায় থাকা সেই চিতোর প্রাসাদ।
শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব শারদোৎসব কমিটির সভাপতি বিধায়ক সুজিত বসু জানালেন, এই ইতিহাস নির্ভর সিনেমাকে ঘিরে আগুন জ্বালানো হয়েছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সততা ও সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, কোথাও না হলেও আমাদের রাজ্যে ‘পদ্মাবত’ রিলিজ হবে। আমাদের সংস্কৃতি, রুচি আলাদা। আমরা সবাইকে সম্মান জানাতে জানি। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে ‘পদ্মাবত’ সিনেমায় প্রদর্শিত চিতোরের সেই প্রাসাদের অনুকরণে মণ্ডপ তৈরি করছি। প্রসঙ্গত, গতবছর বাহুবলী সিনেমার ধাঁচে মণ্ডপ বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল শ্রীভূমি। এত ভিড় হয়েছিল যে, ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডসে সেরা ‘ক্রাউড পুলার’ পুজো হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল এ পুজো। এবার ১০০ ফুটের বেশি উচ্চতার মণ্ডপও কলকাতার পুজো মানচিত্রে সাড়া জাগাবে বলে আশাবাদী সুজিতবাবু।
মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও পুজোর দিনগুলিতে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিশিষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রীরা শ্রীভূমিতে আসবেন। মুখ্যমন্ত্রী আগামী শুক্রবার একমাত্র শ্রীভূমির পুজোই উদ্বোধন করবেন বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। এরপর মহালয়ার দিন চেতলা অগ্রণীর প্রতিমার চোখ আঁকবেন তিনি।
জানা গেছে, উদ্বোধন হলেও সাধারণ দর্শকদের জন্য মণ্ডপ খোলা হবে তৃতীয়া থেকে। মহালয়ার দিন জাগো বাংলার পূজাবার্ষিকীর উদ্বোধন করবেন মমতা। সেদিন একটি গানের সিডিও প্রকাশ হবে। ওইদিন তিনি মেয়র পারিষদের সদস্য রতন দে’র ৯৫ পল্লির প্রতিমার মূর্তি উন্মোচন করবেন। এরপর একে একে বাবুবাগান, মুদিয়ালি, শিবমন্দির, ত্রিধারা, একডালিয়া এভারগ্রিন, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজো মণ্ডপ উদ্বোধন করবেন। চতুর্থীর দিন উদ্বোধন করেন সুরুচি সঙ্ঘের পুজো।