এবার শিশু সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা ও নিগ্রহ রোধে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় তৈরি করা হল ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’। আসানসোল আদালত লাগোয়া কথা ভবনে এই বোর্ডের কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। পাশাপাশি, কালিম্পংয়ের জন্যও জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডেরও উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। করোনা অতিমারীর জেরে রাজ্যে বহু শিশু হারিয়েছে তাদের বাবা-মা কে। রাজ্যের যে সমস্ত শিশুর বাবা অথবা মা করোনা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের নিয়ে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় স্নেহ ছায়া প্রকল্পের সূচনা করা হয়। তিনি একই জায়গা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ২৮৯ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্র অনুযায়ী, শিশু ও নাবালক-নাবালিকাদের সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে এবং তাদের নিগ্রহ রোধ করতে আইনি সহায়তা জরুরি। এই সহায়তা দিতে প্রতিটি জেলায় জেলা সমাজকল্যাণ দপ্তরের অধীনে তিনটি পৃথক কমিটি থাকে— ‘ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিট’, ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’ এবং ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশু-সুরক্ষার বিষয়ে সরকার যে সব প্রকল্প তৈরি করে সেগুলি বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব ডিসিপিইউ-এর। বিভিন্ন স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড বা পরিত্যক্ত অঞ্চলে কোনও শিশুকে অনাথ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলে তাদের হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা এবং তাদের সরকার নির্দেশিত সুরক্ষা দেওয়ার কাজ হল সিডব্লিউসি-র। শিশু-নিগ্রহের ঘটনায় তাকে আইনি সহায়তা দেওয়া ও কোনও শিশু অপরাধ ঘটালে তার বিচারের ব্যবস্থা করার কাজটি করে জেজেবি।
এদিন মন্ত্রী শশী জানান, “পশ্চিম বর্ধমান জেলায় অনেক আগেই ডিসিপিইউ ও সিডব্লিউসি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু জেজেবি তৈরি না হওয়ায়, এই জেলার শিশুদের এত দিন আইনি সহায়তা পেতে পূর্ব বর্ধমানে ছুটতে হত। এতে শিশু মনে নানা ধরনের প্রভাব পড়ছিল। তাই সরকার এই জেলাতেও জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড তৈরি করল।” নিগৃহীত শিশুদের আইনি সহায়তা দেওয়া, শিশু-অপরাধের ঘটনা ঘটলে, তাকে বিচার ব্যবস্থার মধ্যে আনা, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে একটি শিশুবান্ধব পর্যবেক্ষণ কক্ষে রাখার দায়িত্ব এই বোর্ডের। দোষ প্রমাণিত হলে তাকে সংশোধন করার জন্য পরে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষ হোমে পাঠানো হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’-এ তিন জন সদস্য থাকেন। বিচারক হিসেবে থাকবেন জেলা আদালতের এক জন বিচারক ও তাঁর সঙ্গে সমাজের আরও দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তি থাকবেন। দপ্তর সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, পর্যবেক্ষণ কক্ষগুলির পরিবেশ এমন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে শিশুদের কখনও মনে না হয়, তারা কোনও অপরাধ-কক্ষে বন্দি রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক শ্রীময়ী কুণ্ডু। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।