নির্বাচন বলতেই বাঙালি যে ধরনের ছবিতে অভ্যস্ত, দিল্লীর বাঙালি মহল্লায় অবশ্য তার ছিঁটেফোঁটাও নেই। রাস্তাজুড়ে বড় বড় কাটআউট, ফ্ল্যাগ, ব্যানার, হোর্ডিং কোথাও কিছু নেই। তবে নির্বাচনী উত্তাপ ভীষণ ভাবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ আর জলের বিলে বিপুল ছাড় দিয়েছেন কেজরিওয়াল। তাই দিল্লীর বাঙালিরা মজে কেজরিতেই।
সি আর পার্কের যে বিল্ডিংয়ে প্রিয়াঙ্ক সাঁতরার ফ্ল্যাট, সেখানে কয়েক বছর আগেও শুধু লিফটের জন্যই বিদ্যুতের বিল আসত মাসে দু’হাজার টাকা। গত কয়েক মাস ধরে একটি পয়সাও বিল আসছে না। বিদ্যুতের বিলে দিল্লীর কেজরিওয়াল সরকার যে পরিমাণ ভর্তুকি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতিপূর্বে, তার জেরে দিল্লিবাসীর একটি বড় অংশেরই এখন এই পরিস্থিতি।
২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের বিলে ১০০ শতাংশ ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছে দিল্লি সরকার। অর্থাৎ মাসে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিল এলে একটি পয়সাও দিতে হবে না গ্রাহককে। ২০১ থেকে ৪০০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হলে মিলবে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি। অর্থাৎ সুরাহা বিশেষ করে মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর। এতেই ধন্য ধন্য করছে দিল্লীর বাঙালি মহল্লা। যার জেরে রাজধানী শহরের বাঙালি কলোনি সি আর পার্ক, কালকাজি এলাকা, মায় গ্রেটার কৈলাস পর্যন্ত আপাতত কেজরি-ময়! তবে নির্বাচনী মূলধন শুধুই বিদ্যুতের বিল নয়। এর সঙ্গে জুড়েছে জলের বিলও।
মাস ছ’য়েক হল চিত্তরঞ্জন পার্কের (সি আর পার্ক) ডি ব্লকে শিফট করেছেন অসিতবরণ সমাদ্দার। প্রথম মাসে বিদ্যুতের বিল এসেছে দু’টাকা। জমা দিতে নির্দিষ্ট অফিসে গিয়েছিলেন। সেখানে আধিকারিক জানিয়েছেন, ন্যূনতম পাঁচ টাকা বিল না এলে পেমেন্টের প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয়, তৃতীয় মাসগুলিতেও বিল এসেছে শূন্য। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত বিদ্যুতের বিল হিসেবে একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি অসিতবাবুকে। অসিতবাবু বলছিলেন, ‘বেশ কয়েকমাস আগে আমি যে সেই শিফট করেছি এখানে, জলের বিল হিসেবে এক পয়সাও কিন্তু আমাকে দিতে হয়নি। মধ্যবিত্তের পকেট যে সরকার সাশ্রয় করবে, আমরা তো ১০০ শতাংশ সেই দিকেই ঝুঁকব। নাকি?’
দিল্লীর বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কালকাজি, সি আর পার্ক ঘুরে বেরিয়ে অন্তত এই ছবিই সামনে আসছে। সি আর পার্ক অবশ্য গ্রেটার কৈলাস বিধানসভার আওতায়। রাজধানী শহরের অন্য বিধানসভা কেন্দ্রগুলোর মতোই গ্রেটার কৈলাস, কিংবা কালকাজিতেও কংগ্রেসের প্রভাব বা অস্তিত্ব একেবারেই ক্ষীণ। নাম কা ওয়াস্তে কংগ্রেস একজন প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছে বটে, কিন্তু এলাকার মানুষও জানেন, তাঁর পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। লড়াই মূলত বিজেপি এবং আম আদমি পার্টির মধ্যেই। আর এক্ষেত্রে পাল্লা ভারী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দিকেই। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘আপদে বিপদে যিনি পাশে থাকবেন, ভোট তো তাকেই দেব। কে ভালো, কে মন্দ, তার বিচার তো হবে, এলাকার মানুষের ডাকে কে মুহূর্তে পৌঁছে যাচ্ছেন। আমরা কিন্তু আম আদমিতেই সন্তুষ্ট। গত প্রায় পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বৃথা তো যেতে পারে না।’