শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের জাঙ্গিপাড়া কলেজ সংলগ্ন মাঠে তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে সভা করেন তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভায় বক্তৃতার শুরুতেই তিনি এই তীব্র দাবদাহে যে অসংখ্য মানুষ কেবল মাত্র তৃণমূলকে সমর্থন করে মা-মাটি-মানুষের সরকারকে ভালোবেসে সভা উপস্থিত হয়েছেন সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এরপর তিনি সভায় উপস্থিত সকল মা-বোনদের সম্মান জানিয়ে বলেন, যেখানে নারী শক্তি থাকে সেখানে কোনও অশুভ শক্তি জিততে পারে না। এছাড়াও তিনি বলেন, এই গরমে কেউ রাজনীতির ভাষন শুনতে আসে না। যে বিপুল সংখ্যক মানুষ এসেছেন তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালোবেসে তাঁর উপর ভরসা করে এসেছেন। এই এতো সংখ্যক মানুষ বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, আগামী ৬ তারিখ তাঁরা তৃণমূলে ভোট দিয়ে ২৩ তারিখ মোদীকে পরাস্ত করবেন।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ২০১৯ এর লোকসভার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ২০১৪ সালে আমরা কংগ্রেস, বিজেপি ও সিপিএমের সঙ্গে লড়েছি। আর এবার ভারতের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত, চায়ের দোকান থেকে আড্ডার ঠেকে কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দেশের জনদরদি নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। সকলেই চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রী যিনি মানুষের উন্নয়নের কথা ভাববেন। মানুষকে ভালো রাখার জন্য নিজেকে নিয়োগ করবেন। দেশের যুব সমাজ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষজন সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে খুশি।
বিজেপিকে তোপ দেগে অভিষেক এই সভা থেকে বলেন, আচ্ছে দিন আসেনি। এসেছে দুর্বিষহ দিন। এখন নোটবন্দি, জিএসটি, কালোটাকা, নীরব মোদী, রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি উল্লেখ করেন। এবং বলে মোদী গরিবকে ভাতে মারার প্ল্যান করছে। মানুষ চায়ের সঙ্গে বিস্কুট খায় সেই বিস্কুটেও ১৮ শতাংশ জিএসটি বসিয়েছে মোদী সরকার। অন্যদিকে ধনী ব্যক্তিদের ঘরে থাকে সোনার বিস্কুট। তাতে মোদী সরকার জিএসটি বসিয়েছে মোটে তিন শতাংশ। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে মোদী সরকার সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না।
মোদীকে তোপ দেগে তিনি আরও বলেন, ‘মোদী নিজেকে চা ওয়ালা বললেও তাঁকে চা বিক্রি করতে দেখিনি,আজ উনি বলেন উনি চৌকিদার কিন্তু কখনও ওনাকে লাঠি হাতে পাহার দিতে দেখিনি। এমনই চৌকিদার উনি যে, নীরব মোদীরা সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে পালায়। কিন্তু আমাদের নেত্রী আজও টালির ঘরে থেকে মানুষের কথা ভাবেন। এখানেই মিথ্যাবাদী মোদী এবং বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্থক্য। ওনার কাছে মানুষের উন্নয়নের জন্যে টাকা নেই কিন্তু নিজের জন্যে আছে তাই দিল্লীতে সেভেন স্টার পার্টি অফিস তৈরী হয়।
এরপরে অভিষেক বলেন, “অমিত শাহ কিছুদিন আগেই এখানে সভা করে গেছেন, মাঠের কি অবস্থা ছিল আমরা জানি, অর্ধেক মাঠও ভরেনি। আর আজ দেখুন মানুষ নিজের ইচ্ছায় এই রোদ উপেক্ষা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে এসেছেন। ওরা শুধু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে। কিন্তু এমনই হিন্দুত্ব যে ওরা বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি এখানে দুর্গাপুজো করতে দেয় নি। মিথ্যাবাদীদের লজ্জা থাকা উচিত। আমরাই ২৮ হাজার ক্লাবকে পুজোর জন্যে অনুদান দিয়েছি”।
বিজেপির হিন্দুদের নিয়ে এই বিভাজনকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “রামনামেও ওরা আর বাঁচতে পারবে না। ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে দাঙ্গা করাই ওদের একমাত্র কাম। ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে রান্নার গ্যাসের কেন এত দাম? আর আমি বলছি জয় শ্রী রাম, ২৩ মে-র পর ভারতীয় জনতা পার্টির থাকবে না কোনও নাম। ওরা সেন্ট্রাল ফোর্স দিয়ে লড়ে আর আমরা মানুষের ভালোবাসা, দোয়া, আশীর্বাদ সততা উন্নয়ন দিয়ে লড়ি”।
এছাড়াও তিনি বলেন বিজেপি খবর রাখে কার ঘরের ফ্রিজে কি মাংস আছে? এদিকে খোঁজ রাখেনা কাশ্মীরে এত জঙ্গী আনাগোনা। এতো বিস্ফোরক প্রবেশ করছে। যারা দেশের সেনাকে ভোট আদায় করার উপাদান মনে করে তার কাছ থেকে আর কি আশা করা যায়। আর বলেন, বাংলাকে নিপীড়িত শোষিত করে রেখেছে মোদী আর জবাব তো বাংলা দেবেই। বিজেপি ৫ বছর ধরে কুড়ে কুড়ে মেরেছে এবার আপনাদের পালা, এমন আঘাত করুন, বিজেপি যেন আগামী ১০০ বছর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। সভা শেষে তিনি কনি সুকান্তের সুরে বলেন, “এই আদিম হিংস্র মানবিকতার আমি যদি কেউ হই, আগামী ২৩ মে ২০১৯ স্বজন হারানো শশ্মানে তোদের চিতা আমি তুলবই”। অভিষেক আহ্বান করেন এটাই হোক এই সভার শপথ।