এবারের লোকসভা নির্বাচনে তাঁর হার যে নিশ্চিত তা একপ্রকার বুঝেই গেছেন তিনি। তাই নিজেকে আর সংযত রাখতে না পেরব একের পর এক ভুল, বিতর্কিত মন্তব্য, এমনকি মারধরেও জড়িয়ে পড়ছেন তিনি। আর এর ফলে বিতর্ক যেন পিছুই ছাড়ছে না আসানসোলের বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র। এবার থানায় ঢুকে হুমকি ও গালিগালাজের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হল। পাশাপাশি বাবুলের প্রচারে বাইক বাহিনীর দাপটের অভিযোগে বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করল কমিশন।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার পুলিশের বিরুদ্ধে বিজেপির তরফ থেকে তাদের কুলটি মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক রাজু যাদবের বাড়িতে ভাঙচুর ও মহিলাদের নিগ্রহের অভিযোগ তোলা হয়। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন এই ঘটনায় পুলিশ যুক্ত ছিল না। এরপরই নাকি অন্তত ৫০ জন মহিলাকে নিয়ে বরাকর ফাঁড়ি ঘেরাও করেন বাবুল সুপ্রিয়। এরপর রীতিমতো ফাঁড়ির মধ্যে ঢুকে আইসি রবীন্দ্রনাথ দলুইকে তিনি ধমক দেন বলে অভিযোগ।
এর পাশাপাশি বাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আসানসোলে নরেন্দ্র মোদীর সভার পর গত বুধবার বাবুলের প্রচারে বাইকের দাপট দেখা যায়। জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদির সভার পর রীতিমতো উজ্জীবিত বাবুল-ব্রিগেড বুধবার জামুড়িয়ার পঞ্চায়েত এলাকায় বাবুলের প্রচার করেন নিজস্ব ঢঙে। কুনুস্তোরিয়া, তপসি, চিঁচুরিয়া, শ্যামলা, চাকদোলা এলাকায় রোড শো’তে বাবুলের প্রচার গাড়ির আগে-পিছে বাইক মিছিলকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বিতর্ক।
এরপরই এ নিয়ে কমিশনে অভিযোগ জানায় তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, অনুমতি না নিয়েই বাইক মিছিল করা হচ্ছে। যে কায়দায় বাইকবাহিনী ঘুরছে তাতে ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে। অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসে কমিশন। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে তারা। শুধু তাই নয়, এই ঘটনায় পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে তারা।
জামুড়িয়া-২ ব্লক তৃণমূলের সম্পাদক মনোজয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বাবুল সুপ্রিয় একজন বিদায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তবু তিনি নির্বাচন বিধি মানছেন না। গ্রামে গ্রামে বাইক বাহিনী নিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন।’ পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, কমিশনের আপত্তি সত্ত্বেও উত্তেজনা তৈরি করার জন্য সেই গানটি বাজিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ ভোট ঘোষণার পর থেকেই দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল বিজেপির জুলুমবাজি। আর ১১ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচন শুরু হওয়ার পর তা এখন মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ভোট শুরু হতেই বাংলার দিকে দিকে মানুষ বিজেপির দাদাগিরির শিকার। দিলীপ ঘোষ, অমিত শাহ, সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া, রাজনাথ সিং, ভারতী ঘোষের পর বিজেপির সন্ত্রাসের রাজনীতির ধারা বজায় রাখছেন বাবুল।
এর আগে বিজেপির বিতর্কিত থিম সং নিয়ে কমিশনের কোপে পড়েছিলেন বাবুল। কারণ কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, দলীয় প্রচারে গান বাজাতে হলে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করেই বাবুলের টুইটার অ্যাকাউন্টে গান আপলোড হয়। বহাল তবিয়তে সেই গান বাজানোও হয় বিভিন্ন জায়গায়। এরপরই শোকজ করা হয় বাবুলকে।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি তাঁর কেন্দ্রের এক অনুষ্ঠানে হিন্দু গ্রন্থ ‘গীতা’ নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেন বিজেপির এই গায়ক-সাংসদ। গীতা নিয়ে ঠাট্টা করতে গিয়ে অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়েই এক ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নোংরা ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এঁকে দেখেই মনে হচ্ছে এঁর কাছে অনেকগুলো গীতা আছে। ভুল ভাববেন না ভাই, আমি গীতার কথাই বলছি।’ সব মিলিয়ে ভোট মরশুমে বাবুলের কৃতকর্মের ফলে আরও কিছুটা ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির।