বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী হিসেবে সায়ন্তন বসুর নাম ঘোষণার পরেই মনক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। তার ওপর ভোট প্রচারে বেরিয়ে প্রথম দিনেই বসিরহাটের ভ্যাবলায় প্রকাশ্য সভায় সায়ন্তন বলেছিলেন, ‘বুথ দখল করতে এলে সিআরপিএফ যেন বুক লক্ষ্য করে গুলি চালায়।’ যার ফলে আরও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল জেলার বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। কারণ যে ভাষায় প্রার্থী কথা বলেছেন, তার ফলে তাঁদেরই মুখ পুড়েছে। এবার সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল। কথা ছিল আজ, বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য সভাপতির উপস্থিতিতে বারাসতে এসে মনোনয়নপত্র জমা করবেন সায়ন্তন। কিন্তু, তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন বুধবার বসিরহাটের প্রার্থী হিসেবে ‘বিজেপির হয়ে’ মনোনয়নপত্র দাখিল করে দিলেন অমিয় সরকার নামে এক বিজেপি নেতা। অমিয় সরকার নামে ওই নেতা বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক পদে ছিলেন। জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী হিসেবে অমিয়র নাম প্রস্তাব করেছেন বিজেপির হিঞ্জলগঞ্জ মন্ডল সম্পাদক জয়দেব বর্মণ। এই ঘটনায় প্রকাশ্যে চলে এল বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল। পাশাপাশি, চরম অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্বও।
ad id=’58631′]
মনোনয়ন পেশের পর বুধবার সন্ধ্যায় অমিয় সরকার সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি করছি। আমার বাড়ি বসিরহাট লোকসভার হিঙ্গলগঞ্জে। আমি এই লোকসভার ভূমিপুত্র। দলের জেলা সম্পাদকও ছিলাম। তাই নির্বাচন ঘোষণার পর আমি আমাদের দলের রাজ্য সভাপতিকে চিঠি দিয়ে বলেছিলাম, বসিরহাট কেন্দ্র থেকে যেন আমাকে প্রার্থী করা হয়। অথচ, আমাকে প্রার্থী না করে দল বাইরে থেকে একজন প্রার্থী করে দিল। তাই আমি ভূমিপুত্র হিসাবে বিজেপির হয়েই বসিরহাট কেন্দ্রের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। তাঁর কথায়, ‘আমি ভূমিপুত্র। দলের রাজ্য দফতরে প্রার্থীপদের জন্য জীবনপঞ্জীও জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্থানীয় কর্মীদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে সায়ন্তন বসুকে প্রার্থী করে পাঠালেন।’কিন্তু, দলীয় নেতৃত্ব দলের প্রতীক তো সায়ন্তন বসুকেই দেবে? এ ব্যাপারে তাঁর এক অনুগামী বলেন, পরে কী হবে তা পরেই দেখা যাবে। আপাতত উনি মনোনয়নপত্র জমা করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির হয়ে তিনি মনোনয়ন দিয়েছেন একটি। আর একটি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন নির্দল হয়ে। বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তিনি যে মনোনয়নটি জমা দিয়েছেন তাতে ‘এ’ এবং ‘বি’ দু’টি ফর্ম জমা দেননি। ওইগুলি জমা দেওয়ার নোটিস দেওয়া হয়েছে তাঁকে। প্রসঙ্গত, ‘এ’ ফর্মটি হচ্ছে দলীয় অনুমোদনের জন্য ও ‘বি’ ফর্মটি হল দলীয় প্রতীকের। অর্থাৎ তাঁর কাছে এখনও পর্যন্ত দলের মনোনয়ন বা প্রতীক কোনওটাই নেই। তবে এ ব্যাপারে সায়ন্তনের সাফাই, অমিয় সরকার নামে কেউ বিজেপির হয়ে মনোনয়নপত্র জমা করেছে বলে আমার জানা নেই। ‘এ’ ফর্ম ও ‘বি’ ফর্ম আমাদের কাছে আছে। তাই উনি যদি বিজেপির হয়ে জমা করে থাকেন তাহলে এ ফর্ম ও বি ফর্ম দিতে হবে। তা না হলে ওনার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, সায়ন্তন বসু প্রার্থী হওয়ার পরই তাঁকে বহিরাগত বলে আখ্যা দিয়ে একটি পোস্টারও ঘুরছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে, এদিন অমিয় সরকারের মনোনয়নের পর বিরোধীদের দাবি, বিষয়টি গোষ্ঠী কোন্দলেরই ফল। উল্লেখ্য, গত সোমবার যোগী আদিত্যনাথের জনসভায় বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর হাজির না হওয়ায় জোর জল্পনা তৈরি হয়েছিল। শান্তনু ঠাকুর অসুস্থতার কথা দাবি করলেও বিরোধীরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও ভাগবাঁটোয়ারার অভিযোগ তুলেছেন। সেই জল্পনা কাটতে না কাটতেই সায়ন্তন বসুর আগে দলেরই এক নেতার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে। যা নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে রাজ্যের গেরুয়া শিবির।