গত ১১ এপ্রিল থেকে গোটা দেশের পাশাপাশি বাংলাতেও শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচন। সাত দফা নির্বাচনের মধ্যে ইতিমধ্যেই সাঙ্গ হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোট। আগামী ২৯ এপ্রিল চতুর্থ দফায় রয়েছে আসানসোল কেন্দ্রে ভোটদান পর্ব। সেই আসানসোল, ২০১৪ সালে নির্বাচনের ঠিক আগে এমন সময়েই যেখানে বাসিন্দাদের দু’হাতে দু’টি লাড্ডু তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। তবে তার বিনিময়ে তিনি শর্ত দিয়ে বলেছিলেন ‘হামকো বাবুল চাহিয়ে’। শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা কথা রেখেছিলেন। নির্বাচনে বাবুলকে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু লাড্ডু মেলেনি। উল্টে খনি অঞ্চলের শ্রমিকরা বিগত ৫ বছর ধরে চোখের জল ফেলছেন।
আজ, মঙ্গলবার মোদী ফের আসানসোলে আসছেন। কিন্তু এবার আর শিল্পাঞ্চল তাঁর প্রতিশ্রুতি শুনতে চায় না। পা দিতে চায় না চৌকিদারের জুমলাবাজির ফাঁদে। বরং তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৫ বছর আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি না রাখার জবাব চাইছেন। লাড্ডুর বদলে কেন চোখে জল নিয়ে শিল্পাঞ্চলকে বাঁচতে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার ব্যাখ্যা চাইছেন আসানসোলবাসী। কেউ কেউ আবার কটাক্ষ করে এ কথাও বলছেন যে, দুটি লাড্ডু বলতে হয়তো দুটি বড় কারখানা বন্ধের কথা বলেছিলেন মোদী। বুঝতে ভুল হয়েছিল তাঁদেরই। তিনি হিন্দুস্থান কেবলস এবং বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধ করে কথা রেখেছেন।
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী লাড্ডু বলতে উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, আরও কারখানা স্থাপন করে বিজেপি সরকার হয়তো শিল্পাঞ্চলকে সমৃদ্ধ করবে। কিন্তু হয়েছে ঠিক উল্টোটাই। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বা হিন্দুস্থান কেবলসে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে শ্রমিকদের দীর্ঘশ্বাস। চোখে জল নিয়েই তাঁরা কোনওরকমে বেঁচে রয়েছেন। বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের কর্মী বিনয় মিশ্র বলেন, এখন একটি ডেকরেটর সংস্থায় কাজ করে কোনওরকমে সংসার চলছে। কী লাড্ডু যে পেয়েছি, তা আমাদের থেকে কেউ ভালো জানে না। সংসারের হাঁড়ি চড়ানোর জন্য ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। এখনও বকেয়া পাইনি।
সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বার্নপুরের এই সংস্থা বন্ধ হওয়ার সময় ২৫০ জন স্থায়ী কর্মী ছিলেন। অস্থায়ী কর্মী ছিলেন ২২৫ জন। কেউ এখন আর সুখে নেই। হিন্দুস্থান কেবলসের প্রাক্তন কর্মী দেবেন্দ্র চৌধুরী বলেন, আমাদের সঙ্গে কেন এরকম করা হল তার ব্যাখ্যা প্রধানমন্ত্রী সভা থেকে দিলে ভালো হয়। আশা জাগিয়েও আমাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে। বিজেপিকে ভোট দেওয়ার পরিণতি আমরা ভালোভাবেই টের পাচ্ছি। প্রসঙ্গত, দুর্গাপুরে ২ ফেব্রুয়ারি সভা করেছিলেন মোদী। কিন্তু তিনি ওই সভায় শিল্প নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। তাতে ইস্পাতনগরী হতাশ হয়েছিল। তাই আসানসোলের সভা থেকেও তিনি আদৌ বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলি নিয়ে মুখ খুলবেন কিনা তা নিয়ে অনেকেই ধন্দে রয়েছেন।
অন্যদিকে, এ নিয়ে ইতিমধ্যেই মোদীকে তুলোধনা করতে শুরু করেছে তৃণমূল। একটি সভায় দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেতা মলয় ঘটক বলেন, উনি আগেরবার এসে বলেছিলেন হামকো বাবুল চাহিয়ে। কিন্তু তারপর কী হয়েছে তা আসানসোলের প্রতিটি মানুষ জানেন। শ্রমিকরা চোখে জল ফেলছেন। তৃণমূল নেতা তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভাঁওতার জবাব এবার ভোটাররা দেবেন। আর রাজনৈতিক মহলের মতে, গত নির্বাচনের আগে মোদির সভা ঘিরে অন্য উন্মাদনায় ফুটছিল খনি অঞ্চল। নতুন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় আমজনতাও সেখানে ভিড় করেছিলেন। কিন্তু এবার সেই উন্মাদনায় যথেষ্টই ভাটা পড়েছে।