আসানসোল লোকসভার অন্তর্গত বারাবনির গৌরান্ডি মাঠে জনসভা করলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভায় যে বিপুল জনসমাবেশ হয়েছিল তা আবারও প্রমাণ করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের আস্থা।
বক্তব্যের প্রথমেই সভায় উপস্থিত সকলকে তিনি অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানান এই তীব্র রোদ উপেক্ষা করে সভায় আসার জন্যে। আজকের এই সভা ছিল আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেনের সমর্থনে। উপস্থিত ছিলেন তাঁর দুই কন্যা রিয়া এবং রাইমাও। আজকের এই চড়া রোদ উপেক্ষা করে সবাই যেভাবে খেয়ে বা না খেয়ে উপস্থিত হয়েছেন তাঁদের প্রতি অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, “ রোদ উপেক্ষা করে যারা এসেছেন তাঁরা শুধু ভাষণ শুনতে আসেননি। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন আগামী ২৯ তারিখ দিল্লীর মাটি থেকে মিথ্যাবাদী বিজেপিকে উৎখাত করবেন”। অন্যান্য সভার মত আজকেও তিনি বিজেপির অক্ষমতা নিয়ে কটাক্ষ করেন।
তিনি বলেন, “ আমি যেখানেই সভা করতে গেছি জনজোয়ার চোখে পড়েছে। সবাই এই লক্ষ্যেই লড়ছেন যাতে বিজেপিকে সর্বস্বান্ত করা যায়। এটা একটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও। আজ এখান থেকে কিছুটা দূরে মোদীর সভা হচ্ছে। ২০১৪ সালে উনি বলেছিলেন, বাবুল সুপ্রিয়কে জেতান, আসানসোলের ভোল বদলে দেব।বাস্তবে হল কাঁচকলা। ওদের কাউকেই আর দেখা যায়নি। এখন আবার আসছে হাত পেতে ভিক্ষা করতে। এই পাঁচ বছরের মধ্যে পৌনে পাঁচ বছর দিল্লিতে কাটিয়েছেন সাংসদ বাবুল। একটা কাজও করেনি। উনি বলেছিলেন, হিন্দুস্থান কেবলসের জটিলতা মেটাব। মানুষকে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছেন। এই মিথ্যাবাদীর দলকে আগামী দিনে এমন ভাবে জবাব দিন যাতে ওরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে’।
এরপরে তিনি বলেন, “ বাবুল সুপ্রিয়র কাছে চ্যালেঞ্জ রইল ক্ষমতা থাকলে কাজের পরিসংখ্যান দাও, গোলের মালা পড়িয়ে মাঠের বাইরে পাঠাব।ধর্মের ভিত্তিতে ওরা বিভাজন করে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাঁধাতে চাইছে। যারা সেনার নামে ভোট চায় তাঁদের কি ভোট দেওয়া উচিৎ? কার ফ্রীজে কি তরকারি রয়েছে সেই খবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে থাকে আর কাশ্মীরে ৩৫০ কেজি আরডিএক্স রয়েছে সেই খবর থাকে না”।
মোদীর বিরুদ্ধে আরও কটাক্ষ করেন তিনি, “আবার যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে তাহলে ওরা আর নির্বাচনই করবে না, দেশের সংবিধান বদলে দেবে, মানুষকে মেরে ফেলবে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল আচ্ছে দিন আসবে, ২ কোটি বেকারের চাকরি হবে, স্কুল হবে, কলেজ হবে, বাংলাকে লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, এই হবে তাই হবে। কিন্তু হল কী? আচ্ছে দিনের নামে হল কাঁচকলা। ওরা একটা বেকারকেও চাকরি দেয় নি। যে হিন্দুধর্মের নামে ওরা পাঁচ বছর আগে ভোট চেয়েছিল ভোট মিটলে সেই হিন্দুধর্ম নিয়ে একটা কিচ্ছু করেনি। কখনও নোটবন্দী, কখনও এনআরসি, কখনও জিএসটি নিয়ে মানুষকে হয়রানি করেছে। দেশের মানুষ কি খাবে কি পড়বে তাই নিয়ে মাথা ঘামানো খালি, কাজের দিকে মন নেই’।
এরপরে তিনি বলেন, “২০১৪ সালে সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, হার্মাদ সিপিএম-এর সঙ্গে লড়াই ছিল ।এবার লড়াইটা মূলত দুটো আদর্শের, দুটো মানুষের। এক হল দুর্নীতিগ্রস্ত মোদী এবং সততার প্রতীক বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আমাদের কাছে এবার সুযোগ এসেছে মিথ্যবাদী বিজেপিকে বাংলা এবং দেশ থেকে উৎখাত করার, এই সুযোগ আমরা কিছুতেই হাতছাড়া করব না। সবাই বিজেপির বশ্যতা মানলেও মমতা মাথা নোয়ায়নি। তাঁকে ধমকে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ মোদী যত এরকম করেছেন বাংলায় তত বেড়েছে উন্নয়নের খতিয়ান। মমতার সমর্থনে তত মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
অভিষেক বলেন, “ উনি নাকি মানুষের কথা ভাবেন। তাই নীরব মোদীরা সাধারণের টাকা মেরে বিদেশ পালায়। উনি নিজেকে চৌকিদার বলেন, এমনই চৌকিদার যে তাঁর সামনে দিয়ে লোকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। অমন চৌকিদারের দরকার নেই। আগে নিয়ম ছিল কেউ অপরাধ করে জেলে যায় এখন অপরাধ, চুরি, দাঙ্গা করে লোকে বিজেপিতে যায়। আমাদের ধর্ম কখনও বিভাজন শেখায় না। কিন্তু ওরা শুধু ধর্মের নামে রাজনীতি করে। মানুষ তা আর মেনে নেবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বাংলা জুড়ে উন্নয়ন করেছেন তার ধারে কাছে নেই মোদী”।
তিনি আরও বলেন, “ এই মাটি বিপ্লবীদের মাটি, নেতাজীর মাটি, শ্রী চৈতন্যের মাটি এই মাটিতে ওদের মিথ্যা কথা আর চলবে না। আজ এই বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই, আমার মা-বোনেরা আগামী ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রচার করবেন আর ২৯ তারিখে ভোটের বাক্সে জবাব দেবেন বিজেপির যাবতীয় মিথ্যে কথার বিরুদ্ধে। মনে রাখবেন ভোটটা এমন ভাবে দিতে হবে যাতে মোদী যেভাবে বাংলাকে বঞ্চিত, লাঞ্ছিত করে রেখেছে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া যায়। বোতাম টিপবেন এখানে, কোমর ভাঙবে ওখানে। জোড়াফুলে ভোট দেওয়া মানে মোদীকে দেশছাড়া করা। আজকে বিজেপির বিরুদ্ধে যারাই লড়েছে তাঁদেরকেই ধমকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধমক দিয়ে, সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে তাঁর উন্নয়ন থামানো যাবে না, তিনি অন্যায়ের কাছে বশ্যতা স্বীকার করবেন না।
এরপরে তিনি আরও বলেন, “ আমাদের জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন তোমরা আমাকে ৪২-এ ৪২ দাও আমি তোমাদের ধর্মনিরপেক্ষ ভারত দেব। তাঁর এই সেই নির্দেশকে পালন করার জন্যে, মোদীর সব ভাঁওতাবাজির জবাব দিতে গর্জে উঠুন ভোটবাক্সে। মনে রাখবেন একমাত্র তৃণমূলই সবসময় আপনাদের পাশে থাকে। সবার যে কোনও সমস্যাতে একমাত্র একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সমাধান খুজে বার করেন”।
বিজেপির ধর্ম নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি, রাম নিয়ে রাজনীতির বিরুদ্ধেও মুখ খোলেন তিনি। বলেন, “ ওরা বুঝে গেছে রাম দিয়ে আর ভোট পাওয়া যাবে না। ২৩ তারিখে বাংলা এবং দেশ তৃণমূলময় হয়ে যাবে”। এরপরে মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “এর আগের গ্যাসের দাম ছিল ৪০০ টাকা আজকে দাম হয়েছে ৭৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এটাই আচ্ছে দিন”। এরসঙ্গেই পেট্রল-সহ নানা জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও মোদীকে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, “ ঠিক ভোটের আগেই কমল সব কিছুর দাম কারণ বিজেপি ভয় পেয়েছে। সব সমীক্ষা দেখিয়েছে আগামী দিনে ওরা গো-হারা হারছে। ওরা যত হারবে তত সবকিছুর দাম কমবে”।
বক্তব্যের শেষে বলেন, “এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে। তোমার রামের যাবার পালা, ব্যাগবস্তা গোছাও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছে তেড়ে ঢপবাজরা পালাও।মনে রাখবেন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। তাই আসুন, ভোটবাক্সে জবাব দিন ওদের যাবতীয় মিথ্যে কথার। জয় হোক বাংলার”। আজকের সভার এই উচ্ছ্বাস আবারও প্রমাণ করল মানুষ আছে মমতার পাশেই।