ধর্মের জিগির তুলে রামমন্দির ইস্যুকে সামনে রেখেই ২০১৪-তে বিজেপির ক্ষমতায় রসে। তারপরও ভোটে জিততে বারবারই সাম্প্রদায়িক তাস খেলেছেন মোদী-শাহরা। দেশের প্রতিটি প্রান্তে হিন্দুত্বের বাণী প্রচার করে একদিকে যেমন নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন তাঁরা, তেমনি ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটিয়ে দেশের সম্প্রীতির পরিবেশকেও নষ্ট করে ফেলেছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু আদতে দেখা যাচ্ছে তাদের যাবতীয় হিন্দুতের বুলি স্রেফ ভোটে জেতার হাতিয়ার। বিজেপির একাধিক কর্মকান্ড বরং হিন্দুধর্মকেই কলুষিত করেছে।
এবার যেমন হিন্দুধর্মের অসম্মান করলেন খোদ আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। সম্প্রতি তাঁর কেন্দ্রের এক অনুষ্ঠানে হিন্দু গ্রন্থ ‘গীতা’ নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেন বিজেপির এই গায়ক-সাংসদ। গীতা নিয়ে ঠাট্টা করতে গিয়ে অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়েই এক ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নোংরা ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এঁকে দেখেই মনে হচ্ছে এঁর কাছে অনেকগুলো গীতা আছে। ভুল ভাববেন না ভাই, আমি গীতার কথাই বলছি।’ ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে বাবুলের ওই মন্তব্যের ভিডিও। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে উঠেছে তীব্র নিন্দার ঝড়।
চুপ নেই শাসক দলও। ‘গীতা’ নিয়ে ঠাট্টা করায় যথেষ্টই ক্ষুব্ধ জেলা তৃণমূল। আসানসোলের মেয়র তথা তৃণমূল নেতা জীতেন্দ্র তিওয়ারী কড়া ভাষায় বাবুলের সমালোচনা করেছেন। তাঁর দাবি, ‘উনি নিজে হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও গীতা সম্বন্ধে এ ধরণের নোংরা কথা বললে রাজ্যের জন্য আর কী করবেন!’ নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে জীতেন্দ্র বলেন, ‘আমরা আর কী বলবো। বলা তো উচিত তাদের যারা হিন্দু ধর্মের নামে বিজেপিকে ভোট দিতে বলতেন। হিন্দু ধর্মের নামেই বিজেপি ভোটে জিতেছে, কিন্তু ওরাই এখন গীতা, রামায়ণের অপমান করছে, সূর্য মন্দির তৈরির বিরোধীতা করছে। এরাই নাকি আসল হিন্দু!’
এরপরই জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এখন মানুষকে ভাবতে হবে হিন্দু ধর্মের নামে কাদের ভোটে জিতিয়েছিল! সকলকে তাই এটাই বলার যে, ভোটের সময় ধর্মকে ব্যবহার করা উচিত। ধর্ম না দেখে, যে এলাকার, রাজ্যের উন্নতি করতে পারবে তাকেই ভোট দেওয়া উচিত। ধর্মের নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। ধর্মের ভিত্তিতে ভোট হলে এমন মানুষরাই জিতে যায়। এই অপমানটা কোনও মুসলিম করেনি। কোনও মুসলিম গীতা নিয়ে বাজে কথা বলেনি, কোনও শিখও গীতার অপমান করেনি। কারা করেছে? যারা হিন্দু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে জিতে ক্ষমতায় এসেছে, সেই হিন্দুরাই আজ গীতার অপমান করেছে।’ উল্লেখ্য, বিজেপির থিম সং নিয়ে সম্প্রতি কমিশনের কোপে পড়তে হয়েছে বাবুলকে। আর এবার গীতা নিয়ে কুকথা বলায় আরও ব্যাকফুটে তিনি। অস্বস্তিতে পড়েছে হিন্দুত্বের বাণী প্রচার করা গেরুয়া শিবিরও।