পাঁচ বছর আগে সিনেমার পর্দা থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে রাজনীতির ময়দানে এসেছিলেন দেব। হয়েছিলেন ঘাটালের সাংসদ। এবারেও ঘাটাল থেকে তিনিই প্রার্থী। আজকের দেব আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত৷ অনেক বেশি প্রাজ্ঞ৷ এবারের লোকসভা ভোটে প্রচারের জন্য যে সমস্ত সভায় গেছেন দেব সেখানেই উপচে পড়েছে ভীড়৷ না শুধু দেবকে দেখতে নয়, তাঁর রাজনৈতিক ভাষণ শুনতে৷ এভাবেই গতকাল ঘাটালে রোড শো করে আট থেকে আশির উচ্ছ্বাসে ভাসলেন অভিনেতা দেব।
গতকাল সকাল ১০টা নাগাদ ঘাটাল পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের শুকচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ভিড় থিক থিক করছে। সাড়ে দশটা নাগাদ কালো স্করপিও ঢুকতেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন নায়কের অপেক্ষায় থাকা মানুষজন। ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলই, ব্লক তৃণমূল সভাপতি দিলীপ মাঝি–সহ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে উঠে পড়লেন তাঁর জন্য রাখা ফুল, দলীয় পতাকায় সাজানো ম্যাটাডরে। শুরু হল রোড শো। ৫ বছর আগে তাঁর রোড শোয়ে যে উন্মাদনা ছিল, এদিন তা ছিল দ্বিগুণ।
সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত রোড শো করার পর নিমতলা ও হেমতপুরে জনসভা করেন দেব। এখানে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্র সরকারের তুলনা টেনে উন্নয়নের নিরিখে ভোটে দেওয়ার আবেদন জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার সরকার জন্ম থেকে মৃত্যু মানুষের সব পরিষেবায় পাশে থাকে, সে কথাও উল্লেখ করেন দেব।
সভা থেকে দেবকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি মনে করি রামমন্দির গড়ে তোলার চেয়ে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করা বেশি জরুরি। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন–জীবিকা জড়িয়ে আছে। সরকারের জানা উচিত মানুষের কীভাবে আরও উন্নয়ন হয়, কীভাবে আরও ভাল হয়, তা দেখা।’ মানুষের আরও ভালবাসা পেতে চান, আরও কাজ করতে চান বলে জানান দেব। বলেন, ‘মানুষের ভালবাসা আমাকে কাজের উৎসাহ জোগায়। লোয়াদা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানেরও কাজ শুরু হবে।’
ঘাটালের যে সব এলাকা বন্যাপ্রবণ, তার মধ্যে শুকচন্দ্রপুর প্রথম সারিতে। সাংসদ থাকাকালীন বন্যার সময় বোনের বিয়ে ছেড়ে ৯ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে এসে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দেব। সেকথা ভোলেননি ঘাটালের মানুষ। এদিন সেই শুকচন্দ্রপুর মাঠে গাড়ি থেকে নামতেই মহিলারা শাঁখ বাজিয়ে, ফুল ছড়িয়ে, উলু ধ্বনি দিয়ে দেবকে বরণ করেন। হাজার হাজার কর্মী–সমর্থক রোড শোয়ে অংশ নেন। রঘুনাথচক, আড়গোড়া, আলমগঞ্জ, ময়রাপুকুর হয়ে ঘাটালের বুক চিরে বয়ে যাওয়া শিলাবতী নদীর পূর্ব পাড়ের ১২টি ওয়ার্ড এবং পশ্চিম পাড়ের ৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকায় রোড শো করেন। সকাল থেকেই দেব দর্শনের আশায় রাস্তার দু–পাশে দাড়িয়েছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। রোড শো এগিয়ে আসতেই কেউ ফুল ছুঁড়ে দেন। কেউ মালা পরিয়ে দেন। কেউ সরবত বাড়িয়ে দেন। কেউ মিষ্টির প্লেট ও জলের গ্লাস বাড়িয়ে দেন। মাঝে মধ্যেই ভিড় থেকে শিশুদের কাছে ডেকে কোলে তুলে নেন দেব।