প্রার্থী বাছাইয়ের আগে থেকেই গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকট হয়ে উঠেছিল। অবশেষে হাজারও টালবাহানার পর ধাপে ধাপে বাংলার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণা করেই দায় ঝেরে ফেলেছে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। আর একেবারে অচেনা-অজানা প্রার্থীদের নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
আনকোরা প্রার্থীদের সঙ্গে দলের কর্মী-সমর্থকদের পরিচয় করাতে গিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়ছেন স্থানীয় নেতৃত্ব। প্রচারে বেরিয়ে প্রার্থীও এলাকার মানুষের নানা প্রশ্নে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ভোটাররা এলাকার সমস্যার কথা বললে, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারছেন না প্রার্থী। পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে ওই স্থানীয় নেতাদেরই। ঘটনায় বিরক্ত তাঁরা।
যেমন ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে বালুরঘাটের নীলাঞ্জন রায়কে। নীলাঞ্জনের নাম ঘোষণার পরেই জেলার নেতারা ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। প্রার্থী বদলের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্র নেতৃত্বের কাছে আবেদনও জানান তাঁরা। প্রকাশ্যে সরব হন জেলার অন্যতম নেতা সন্তোষ কুমার। তিনি বলেন, ‘ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে লড়াই করার জন্য পরিচিত প্রার্থীর দরকার ছিল। কিন্তু এমন একজনকে দল প্রার্থী করেছে, তাঁকে জেলার কেউ চেনেন না।’
তবে বহিরাগত প্রসঙ্গে নীলাঞ্জনের দাবি, রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রেই প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। কোথাও কোনও ক্ষোভ নেই। কর্মীসভাতেও ভাল সাড়া পাচ্ছেন তিনি।’
অন্যদিকে, তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে এবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন নবদ্বীপের কীর্তনিয়া সিদ্ধার্থ নস্কর। আর কাঁথিতে প্রার্থী হয়েছেন চিকিৎসক দেবাশিস সামন্ত। কাঁথি লোকসভার বাজকুলের বাসিন্দা দেবাশিসবাবু রাজনীতিতে একেবারেই অপরিচিত মুখ। স্বাভাবিকভাবে দুই কেন্দ্রের প্রার্থী চেনাতেই এখন কালঘাম ছুটছে বিজেপি শিবিরে। স্বাভাবিকভাবে ভোট লড়াইয়ে জায়গা ধরে রাখার ব্যাপারে বেশ সংশয়ে বিজেপি।
মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুরে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের মাফুজা খাতুন। কুমারগঞ্জের দু’বারের সিপিএম বিধায়ক তিনি। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে জঙ্গীপুরের দূরত্ব প্রায় ১৯০ কিলোমিটার। জঙ্গীপুরের বাসিন্দাদের তাঁকে চেনার কথা নয়। প্রচারের বেরিয়ে নানা প্রশ্নে বিব্রত প্রার্থী। এলাকার নেতারা কার্যত হতাশ।
মাফুজা যখন সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, জঙ্গীপুর বা সাগরদীঘির কোন এলাকায় ভোট চাইতে যাচ্ছেন, তখন বহিরাগত এ প্রশ্ন তো উঠছেই, পাশাপাশি বিজেপির গোরক্ষার নামে তাণ্ডব, সংখ্যালঘুদের হুমকি দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আসামের বিভিন্ন জেলায় বহু মানুষ এনআরসির নামে আজ এলাকা ছাড়া। এসব নিয়ে ওঠা প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারছেন না মাফুজা।
যদিও বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদের সভাপতি সুজিত দাসের দাবি, ‘মুসলিম ভোট বেশি আছে বলে নেতৃত্ব বাইরের মাফুজাকে প্রার্থী করেছেন। বাইরের বলে সমস্যা যে নেই তা বলব না। তবে স্থানীয় কেউ প্রার্থী হলে ভাল হত।’ বহরমপুরের বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণজোয়ারদার আর্য।
প্রচারে বেরিয়ে হাত জোড় করে ভোট দেওয়া আবেদন করলে এলাকার মানুষ অবাক চোখে জানাতে বলছেন, ‘আপনাকে তো কোনওদিন দেখিনি। নামও তো কখনও শুনিনি।’ এতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন বিজেপির জেলা নেতারা। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের খুব কাছের মানুষ কৃষ্ণজোয়ারদার আর্য। দিলীপের বাড়িতে বৈদিক যজ্ঞ করেছিলেন।
বারাসতের বিজেপি প্রার্থী পেশায় চিকিৎসক মৃণালকান্তি দেবনাথকে চেনেন না অধিকাংশ ভোটারই। আশ্চর্যের হলেও সত্যি, প্রায় সত্তর বছর বয়সে এবারই প্রথম ভোট দেবেন মৃণালবাবু। তাই দলীয় কর্মীরাও এখন বলছেন গণতন্ত্রের হাতিয়ার ভোটই যিনি এর আগে দেননি, তিনি নিজ…