হাতে বাকি আর মাত্র ১০ দিন বাকি। তারপরেই শুরু হতে চলেছে দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচন। ফলে ভোটের মুখে বিজেপি যত এড়িয়ে যেতে চাক, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলই এবারের লোকসভা ভোটে আসামে সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস, এআইইউডিএফের পাশাপাশি আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা অগপ-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রফুল্লকুমার মহন্ত সেই কথাটিই মনে করিয়ে দিলেন। অথচ, শনিবার অসমে দু-দুটি জনসভা করলেও এই বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে একটি কথাও খরচ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বরং, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ রোধে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। জবাব দিতে কার্পণ্য করেনি কংগ্রেসও।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হিসেবে আসা হিন্দু, খ্রিষ্টান, শেখ, বৌদ্ধ, পার্সি ও জৈনদের নাগরিকত্ব দিতে লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করায় মোদী সরকার। কিন্তু আসাম থেকে শুরু করে গােটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঝড় বয়ে যায় বিলটি বিরুদ্ধে। রাজ্যসভায় বিলটি আটকে যায়। তবে বিজেপি এখনও আশা ছাড়েনি। অধ্যুষিত এলাকায় বিল পাশ করানোর কথা বলেও গিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু কাল অসমীয়া-প্রধান এলাকায় প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন। বিলের কট্টর বিরোধী অগপ-র সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে লােকসভা ভোটের আগে ফের সমঝোতা করে আসামে নির্বাচনে লড়বে বিজেপি। কিন্তু এই জোটে সায় নেই দলের হেভিওয়েট নেতা প্রফুল্ল মহন্তর। তিনি প্রচারেও বের হচ্ছেন না।
রবিবার সাংবাদিকদের মহন্ত বলেন, ‘নাগরিকত্ব বিলের প্রকৃত বিরোধী যারা, তাদেরই ভোট দেওয়া কর্তব্য অসমবাসীর। এই বিল সংসদে পাশ হলে আসামের সর্বনাশ হবে। হারিয়ে যাবে জাতপাতের ভারসাম্য। মহন্তর সাফ কথা, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলই এবার ভোটের বড় ইস্যু। একই মত এআইইউডিএফ-এর। দলের প্রধান বদরুদ্দিন আজমল মনে করেন, এর ভিত্তিতেই আসাম বাসী ভােট দেবেন। একই সঙ্গে যোগ করেন বাঙালিদের
ওপর এনআরসি-জুলুমের কথাও। প্রসঙ্গত, কংগ্রেস জোট করতে চায়নি বদরুদ্দিনের দলের সঙ্গে।
মোদী আসামে ভোটের প্রচারে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী নিয়ে গলা ফাটানোয় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। কংগ্রেস নেতার দাবি, গত পাঁচ বছরে আসামে কতজন বিদেশিকে ধরতে পেরেছে বিজেপি সরকার সেই তথ্য সামনে আসুক। তাঁর অভিযোগ, হার নিশ্চিত বুঝেই মােদী এখন মিথ্যে কথা বলছেন। খিলঞ্জিয়া (ভূমিপুত্র)দের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে।
কংগ্রেসও তাদের ভোট প্রচারে নাগরিকত্ব বিলকে হাতিয়ার করেছে। আসামের সুশীল সমাজও ডাক দিয়েছে বিলের হােতা বিজেপিকে পরাস্ত করার। প্রবীণ বুদ্ধিজীবী হীরেন বড়গোঁহাইয়ের মতোই কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির প্রধান অখিল গগৈ বিজেপি-অগপ জোটকে পরাস্ত করার ডাক দেয়। সবমিলিয়ে ঠিক ভোটের দোরগোড়ায় বিরোধীরা যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে, তাতে আসামে এখন ‘শনির দশা’ বিজেপির।