প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে থেকেই গেরুয়া শিবিরে শুরু হয়ে গিয়েছে গোষ্ঠীকোন্দল। দীর্ঘ টালবাহানার পর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হতেই সেই কোন্দল এখন তুঙ্গে। কোচবিহার, উত্তর মালদা, জলপাইগুড়ি, মথুরাপুর, হুগলী, সব জায়গায় একই চিত্র। এবার ঘাটাল থেকে বিজেপির প্রার্থী হওয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে নিয়ে কোন্দল মাথাচাড়া দিয়েছে বিজেপির অন্দরে। এমনকি বিজেপির যুব মোর্চার তরফে এবার ঘাটালে পোস্টারও পড়ল ভারতীর বিরুদ্ধে। ওই পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী গরু চুরি, সোনা চুরি এবং বালি পাচারে অভিযুক্ত ভারতী ঘোষকে আমরা মানছি না, মানব না।’
তবে এই প্রথম নয়। প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবিতে খোদ দলীয় কর্মীদের তরফ থেকেই দিকে দিকে পড়ছে পোস্টার। নিশীথ প্রামাণিক, খগেন মুর্মু, সায়ন্তন বসু, লকেট চট্টোপাধ্যায়—বিজেপির একের পর এক ঘোষিত প্রার্থীকে নিয়ে দলের মধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত, তৃণমূল থেকে সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েই লোকসভা নির্বাচনের টিকিট পেয়ে যাওয়ায় তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয় কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিককে কেন্দ্র করে। দিনকয়েক আগেই এবিএন শীল কলেজের সামনে একটি ফেস্টুন দেখা গিয়েছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘দিনহাটার স্মাগলার নিশীথ প্রামাণিক বিজেপির প্রার্থী হলে একটিও ভোট নয়’। নোটা-য় ভোট দেওয়ার জন্যও আবেদন জানানো হয়েছিল ওই ফেস্টুনে।
আবার, মালদা উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া খগেন মুর্মুকে কেন্দ্র করেও একইরকম বিক্ষোভ চলে ওই জেলায়। ওই কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হতেই গাজোল, পুরাতন মালদা এমনকি খগেন মুর্মুর বিধানসভা এলাকা হবিবপুরেও একাধিক পোস্টার দেখা যায়। কোনও পোস্টারে লেখা, ‘যার চার চারটি বউ, তাকে আমরা ভোট দেব না কেউ।’ আবার কোনও পোস্টারে তাঁকে, ‘জমি মাফিয়া, বহু পত্নীক, হিন্দু সমাজের কলঙ্ক’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি পোস্টারের তলাতেই লেখা ছিল ‘উত্তর মালদা লোকসভা বিজেপি’। বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসুর বিরুদ্ধেও বিজেপির তরফে পোস্টার পড়ে। ওই পোস্টারে দাবি করা হয়েছে, স্থানীয় নেতাকে প্রার্থী করতে হবে।
অন্যদিকে, হুগলীতে প্রার্থী না করায় রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন রাজকমল পাঠক। বীরভূমে আবার দুধকুমার মন্ডলের প্রার্থীপদ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের অনুগামীরা। মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শ্যামাপ্রসাদ হালদারকেও না-পসন্দ স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের। তাঁদের হুঁশিয়ারি প্রার্থী বদল না হলে নির্দল প্রার্থী দিতেও দ্বিধা করবেন না। সবমিলিয়ে গোটা রাজ্যজুড়েই এই মুহূর্তে অন্তর্কলহে জেরবার গেরুয়া শিবির। যা সামাল দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস বিজেপি নেতৃত্বের।