রবিবারই নিজের কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেছেন তিনি। যেখানেই যাচ্ছেন, বহু মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা পাচ্ছেন। তাই নিজের জয় নিয়ে একশো শতাংশ নিশ্চিত বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ও রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, সামনে কোনও বিরোধী প্রার্থীকেই দেখতে পাচ্ছেন না তিনি। মঙ্গলবার জঙ্গলমহলের রানিবাঁধের কর্মিসভায় বিজেপিকে কটাক্ষ করে সুব্রত বলেন, ‘কার সঙ্গে লড়ব? নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর ১৫ দিন পেরিয়ে গেল। অথচ বিজেপি তাদের প্রার্থীর নামই ঘোষণা করতে পারল না!’
গতকাল সুব্রতর ওই কর্মিসভা ঘিরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উচ্ছ্বাস। প্রচুর আদিবাসী, বিশেষ করে মহিলারা ওই কর্মিসভায় জড়ো হয়েছিলেন। সুব্রত গাড়ি থেকে নামতেই আদিবাসী মহিলারা তাঁকে ঘিরে ধরেন। অনেকেই প্রণাম করেন। প্রবীণরা জোড় হাতে নমস্কার জানান। দলের কর্মীরা দলের নামে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে এবং তাঁর নামে স্লোগান তোলেন। ফলে কর্মিসভা রূপ নেয় প্রকৃত জনসভায়। ব্যাপক আদিবাসীদের সমাগমে উচ্ছ্বসিত সুব্রতও তাঁর বক্তব্যের শুরুতে সে কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘ডাকা হয়েছিল কর্মিসভা। কিন্তু, এখন তো দেখছি তা জনসভায় রূপান্তরিত হয়েছে!’
নিজের বক্তৃতায় বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘শুনতে পাচ্ছি, ওরা নাকি অপেক্ষায় আছে কবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দল থেকে কোনও একজনকে তাড়াবেন, ওরা তাঁকেই খপ করে ধরে নিয়ে প্রার্থী করে দেবে। রাজ্যের অন্যত্র থেকেও প্রার্থী আনা হতে পারে। সে যাই হোক, এখনও ওদের প্রার্থী এসে পৌঁছননি। আমরা ওদের প্রার্থীর অপেক্ষায় বসে আছি।’ এরপরই তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত একজন প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে। তিনি সিপিএমের। গত বিধানসভায় তালডাংরা কেন্দ্র থেকে আমার সহকর্মী সমীর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে লড়ে অনেক ভোটে হেরেছেন তিনি। তাঁর লড়াইটা দ্বিতীয় বা তৃতীয় হওয়ার জন্য নয়, চতুর্থ বা পঞ্চম হতে পারেন। আর আমি এই কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছি শোনার পর কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁরা এই কেন্দ্রে কোনও প্রার্থী দেবে না।’
প্রসঙ্গক্রমে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে আমি একবার দাঁড়িয়েছিলাম কংগ্রেসের হয়ে। কিন্তু সেবার কংগ্রেসের অবস্থা ভাল ছিল না। আমি কিছু ভোটে হেরে গিয়েছিলাম। সাধারণত দেখা যায়, হেরে গিয়ে কোনও প্রার্থী সেই কেন্দ্রে আর ফিরে আসেন না। আমার ক্ষেত্রে সেটা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। গত ৫ বছরে আমি সবচেয়ে বেশিবার এসেছি এই জেলায় এবং সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি এই জেলার জন্য। ওই হারের পর আমাকে দল বিধানসভা নির্বাচনে ফের প্রার্থী করে এবং মুখ্যমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রামোন্নয়ন দফতরের।’
তাঁর কথায়, ‘ওই সময় বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলা সফরে আমি এবং মুখ্যমন্ত্রী এসে দেখেছিলাম, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলায় জলের জন্য কী হাহাকার! তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, সুব্রতদা, যেমন করে হোক বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার মানুষকে জলকষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। কীভাবে আমরা সেই সঙ্কটের সমাধান করেছি, সেটা এখন রূপকথা হয়ে গেছে। ডিভিসি-র জলাধারে কোটি কোটি গ্যালন জল দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বাঁকুড়ার খুব কাছেই সঞ্চিত এত জল, অথচ বাঁকুড়ার মানুষ জল খেতে পাবেন না, এটা হয় না। তারপর দীর্ঘ লড়াই। প্রথমে টাকাপয়সা জোগাড়, পরে ডিভিসি-র সঙ্গে জল নেওয়া নিয়ে দীর্ঘ লড়াই।’
সুব্রত জানান, ‘তখন দিল্লীতে মোদী সরকার। তারা জানিয়ে দেয়, এই জল শুধুমাত্র চাষের জন্য ব্যবহার করা যাবে। আমরা ওদের কাগজ দেখিয়েছিলাম যে, আগে ওই সিদ্ধান্ত ছিল, পরে সেই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছে। এরপরেও মোদী সরকার নানা টালবাহানা করে। আমরা তখন হুমকি দিয়েছিলাম, স্বেচ্ছায় জল দিলে ভাল, নতুবা আমরা জোর করে জল নেব। তখন কাজ হয়। ওরা সম্মতি দিতে বাধ্য হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বলেছিলেন, কলকাতার মানুষ যেমন ঘরে বসে নলবাহিত পানীয় জল পান, বাঁকুড়ার মানুষকেও সেভাবেই জল দিতে হবে।’
উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগেও তিনি জানিয়েছিলেন, ‘রাজনীতিতে প্রতিটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ। নেত্রী আমার প্রতি আস্থা রেখেই লোকসভায় প্রার্থী হতে বলেছেন। সেই আস্থার মর্যাদা রাখতেই হবে। বাঁকুড়া আমার পরিচিত এলাকা। পঞ্চায়েতমন্ত্রী হিসাবে এই জেলাতেই সব থেকে বেশি কাজ করেছি। বাঁকুড়ার মানুষ সেই উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন। আশা করছি, দলমত নির্বিশেষে বাঁকুড়ার মানুষের সমর্থন পাব।’ গতকালও তাঁর গলায় শোনা গেল একই সুর।