‘আমি সব জায়গাতেই যাই। মানুষের কাছে তো প্রতিদিনই পৌঁছোচ্ছি। ভোট বলে নতুন কিছু না।’ এই দাবি যাঁর, তিনি হুগলীর সাংসদ তথা আসন্ন লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী ডঃ রত্না দে নাগ। ইতিমধ্যেই গোটা জেলা জুড়ে প্রচারের ঝড় তুলেছেন তিনি। কিন্তু অন্যদিকে, হুগলী লোকসভা কেন্দ্রে রত্নার বিরুদ্ধে দাঁড়ান বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাঁটা ক্রমশই বাড়ছে। প্রথমে তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন রাজ্য সহ সভাপতি রাজকমল পাঠক। এবার ভোটে কাজ না করার কথা জানালেন আর এক সহ সভাপতি রাজকুমারী কেশরী। শুধু তাই নয়, বহিরাগতকে প্রার্থী করার জন্য দলের রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধেও প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন রাজকুমারীদেবী।
তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বাইরের প্রার্থী আমরা কোনওভাবেই মানব না। শুধু তাই নয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, উনি নিজের এলাকা দখলে রেখে প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে বাইরের কোনও প্রার্থীকে ঢুকতে দেননি। অথচ অন্যের এলাকায় লোক ঢুকিয়ে দিয়ে মজা দেখছেন। তিনি আরও বলেন, হুগলী লোকসভা কেন্দ্রের সংগঠন আমার হাতে তৈরি। জেলায় যখন বিজেপির অস্তিত্ব ছিল না তখন থেকে আমি বিজেপি করছি। তাই এখন দলের সুদিনের সময়ে জেলা থেকেই কাউকে প্রার্থী করা হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু দল হঠাৎ করে কাউকে বাইরে থেকে নিয়ে এসে প্রার্থী করবে, আমরা তা মেনে নেব না। তাই প্রার্থী ঘোষণার পর সিঙ্গুর, বলাগড়, পান্ডুয়া, চুঁচুড়া-সহ জেলার একাধিক জায়গার প্রায় হাজার দু’য়েক সক্রিয় অনুগামীদের নিয়ে নির্বাচনে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দলের রাজ্য সভাপতি ছাড়াও রাজকুমারীদেবী সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন রাজ্য বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু এবং দীপাঞ্জন গুহর বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, হুগলী কেন্দ্রে আমার প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত ছিল। চক্রান্ত করে রাজ্যের এই তিন নেতা বিজেপির হুগলী জেলা সভাপতি সুবীর নাগের ইন্ধনে আমার হাতে তৈরি এলাকায় বাইরের লোককে প্রার্থী করেছে। নির্বাচনে এর যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। একই অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজ্য সহ সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করা বিজেপি নেতা রাজকমল পাঠকও। তবে এই সমস্ত বিষয়কে একেবারেই গুরুত্ব দিতে রাজি নন জেলা সভাপতি সুবীর নাগ।
তিনি বলেন, ‘রাজকুমারীদেবী রাজ্যের সহ সভানেত্রী হয়ে সরাসরি দলের সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন, এটা খুবই দুঃখজনক।’ সুবীর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনে উনি একসঙ্গে কাজ করবেন বলে আমরা আশাবাদী। তবে রাজকুমারীদেবী যদি তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন, তাহলেও নির্বাচনে বিন্দুমাত্র ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা নেই। দলের সিদ্ধান্তই এখানে শেষ কথা। তবে জেলা নেতৃত্বের বিরোধিতায় অস্বস্তিতে পড়লেও মুখরক্ষা করতে প্রচার শুরু করেছেন বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। ড্যামেজ কন্ট্রোলে তিনি বলেন, প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে অনেকেরই থাকতে পারে। এক্ষেত্রে দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তো কর্মীদের মানতেই হবে। রাগ অভিমান থাকলেও, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করব।
প্রসঙ্গত, প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে থেকেই গোষ্ঠীকোন্দল শুরু হয়ে গিয়েছিল গেরুয়া শিবিরে। দীর্ঘ টালবাহানার পর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হতে সেই কোন্দল এখন তুঙ্গে উঠেছে। কোচবিহার, উত্তর মালদা, জলপাইগুড়ি ও মথুরাপুরের পর এবার প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন হুগলীর জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। সবমিলিয়ে গোটা রাজ্যজুড়েই এই মুহূর্তে অন্তর্কলহে জেরবার গেরুয়া শিবির। যা সামাল দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস বিজেপি নেতৃত্বের।