স্বাধীনতার পরে তো বটেই, এমনকী ৩৪ বছরের বাম শাসনকালে নন্দীগ্রামকে বারবার ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হলেও, পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের বিষয়ে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করা হয়নি। এ রাজ্যে মা-মাটি-মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই নোনা জলবেষ্টিত এই ভূখণ্ডে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পাম্পিং স্টেশনের জমি মেলা নিয়ে প্রথমে কিছুটা জটিলতা থাকলেও, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় স্থানীয় বাসিন্দারাই স্বেচ্ছায় জমি দান করে মিটিয়ে দিয়েছেন সেই সমস্যা। পাইপবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য মমতার সেই প্রতিশ্রুতি গত ৮ ফেব্রুয়ারি হওয়া টেন্ডারের মধ্যে দিয়ে এখন বাস্তবায়নের পথে।
পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮১.৮৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকার নন্দীগ্রাম-১ নম্বর ব্লকে মোট ১০টি পঞ্চায়েতে গ্রামের সংখ্যা ৯৯। এর মধ্যে ৭৮টি গ্রামে পাইপবাহিত পানীয় জল সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা নেই। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, ১০৫.৭৪ বর্গ কিলোমিটারের নন্দীগ্রাম-২ নম্বর ব্লকে মোট সাতটি পঞ্চায়েতে গ্রামের সংখ্যা ৪১। তার মধ্যে ৩২টি গ্রামে পাইপবাহিত পানীয় জল সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা ছিল না।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নন্দীগ্রামের এই দুই ব্লকে ৭৫ শতাংশেরও বেশি বাসিন্দা পাইপবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চনার অবসান ঘটাতেই এডিবি’র সঙ্গে পিএইচই দফতর নন্দীগ্রাম তো বটেই, লাগোয়া নন্দকুমার ও চণ্ডীপুর ব্লকে পানীয় জল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।
রূপনারায়ণ নদ থেকে জল তুলে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে তা পরিশ্রুত করার পর রাখা হবে দু’টি গ্রাউন্ড লেভেল স্টোরেজ রিজার্ভারে। সেখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তা পৌঁছে যাবে নন্দীগ্রামের ঘরে ঘরে। আশা করা যায়, আগামী ২০২০ সালের মধ্যেই নন্দীগ্রামের প্রতিটি নাগরিকের জন্য দৈনিক ৭০ লিটার নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নপূরণ করা হবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (এডিবি) আর্থিক সাহায্যে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠছে নন্দীগ্রামের ১ ও ২ নম্বর ব্লকের জন্য মেগা জল প্রকল্পটি। উপকৃত হবেন প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ।
গত ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে বাজকুলে এক সরকারি অনুষ্ঠান থেকে জলপ্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন তিনি। তার দু’মাসের মধ্যেই টেন্ডার করে প্রকল্পের কাজের সূচনা হয়েছে। নন্দীগ্রামের মানুষ স্বেচ্ছায় জমি দান করে প্রকল্পে গতি এনে দিয়েছেন। পিএইচই মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, প্রতিদিন ১১২ মিলিয়ন লিটার জল পরিস্রুত করতে পারে, এমন একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি হচ্ছে নন্দীগ্রামের জন্য। এখন মাথাপিছু ৭০ লিটার করে দৈনিক পানীয় জল সরবরাহ করা হলেও, জনসংখ্যা বৃদ্ধির জেরে ২০৩৫ সালে নন্দীগ্রাম-১’এ দৈনিক ২৩.২ মিলিয়ন লিটার এবং নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে দৈনিক ১৩.৪ মিলিয়ন লিটার চাহিদা হবে। আরও ১৫ বছর পরে অর্থাৎ ২০৫০ সালে সেই চাহিদা হবে দৈনিক যথাক্রমে ৩০.১ এবং ১৭.১ মিলিয়ন লিটার। সেই সমস্ত চাহিদা মাথায় রেখেই অত্যাধুনিক ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের জল প্রকল্পটি। অধিকার রক্ষা আন্দোলনের পীঠস্থান নন্দীগ্রামের মানুষ দু’হাত তুলে সমর্থন জুগিয়েছিল জোড়াফুল শিবিরকে। চারদিকে নোনা জল বেষ্টিত নন্দীগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কৃতজ্ঞ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কথা রেখেছিল নন্দীগ্রাম, কথা রাখছেন মমতা৷