একদিকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হাসনাবাদের বনবিবি সেতু অন্যদিকে বকখালির হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপর সেতু খুলে গেল গতকাল। সপ্তাহ শেষে বেড়ানোর অন্যতম গন্তব্য বকখালি। আর বকখালি গেলে পর্যটকদের লিস্টে থাকে ফ্রেজারগঞ্জ, হেনরি আইল্যান্ড ও জম্বুদ্বীপ। এতদিন হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী পেড়নোর অন্যতম মাধ্যম ছিল ভুটভুটি। যানবাহন পার হত বার্জে। কিন্তু বকখালি যাওয়ার অন্যতম দুর্ভোগ হাতানিয়া–দোয়ানিয়া নদী। সাধারণ যাত্রীদের ভরসা ভুটভুটি। আর যানবাহন পার হয় বার্জে। নিত্যদিনের দুর্ভোগ তো লেগেই থাকোতো। নামখানা ব্লকের বাসিন্দাদের দাবি ছিল এই সেতু। বিশেষ করে এই ব্লকের উৎপাদিত সবজি ও মাছ বাজারজাত করার জন্য সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম।শুধু ভ্রমন নয়, অর্থনীতির গতি বদলে যাবে এই সেতুর জন্য।
দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে গড়ে উঠেছে এই সেতু। এর দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৩ কিমি। সেতুটি এই মুহূর্তে সুন্দরবনের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু বলে দাবি করা হয়েছে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে। এই নদীর ওপর সেতু তৈরির প্রধান অসুবিধা ছিল আন্তর্জাতিক জলপথের জন্য সেতুর উচ্চতা বিষয়ক। ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এই সেতুর নকশা তৈরি করেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। সেতু নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ১১৭ জাতীয় সড়কের ব্যবসায়ী, দোকানদারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। শুরু হওয়ার পর কয়েকবার নানান কারণে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। কিন্তু অবশেষে সেতু তৈরির কাজ শেষ হওয়ার পথে। জুড়ে গেছে সেতু। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, “মার্চের প্রথম সপ্তাহে সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। পর্যটনের বিকাশে এই সেতু সহায়ক হবে। নামখানা ব্লকের মানুষেরও দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে। রোগীদেরও আর অপেক্ষা করতে হবে না ফেরির জন্য”।
অন্যদিকে হাসনাবাদের বনবিবি সেতুর উদ্বোধন করলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। হাসনাবাদের কাটাখালি নদীর উদ্বোধনে এসে ফলক উন্মোচন করে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের সেতু হাসনাবাদের এই ‘বনবিবি সেতু’। সুন্দরবনের মানুষের জন্য এই সেতু উৎসর্গ করা হল”। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের এই সেতু উদ্বোধন করার কথা ছিল কিন্তু তিনি ব্যস্ত থাকায় খাদ্যমন্ত্রী এই সেতুর উদ্বোধন করেন। এই সেতু সুন্দরবনের অর্থনীতিকে বদলে দেবে।
বনবিবি সেতুর উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বীণা মণ্ডল, বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস, সুকুমার মাহাতো, দেবেশ মণ্ডল, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ফিরোজ কামাল গাজি, নারায়ণ গোস্বামী–সহ পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা। হাসনাবাদ বিডিও অফিসের সংলগ্ন মাঠে সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সভার আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনের পরই সেতু খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য।
২০০৬ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শিলান্যাস করলেও কাজ তেমন কিছুই হয়নি। তৃণমূল সরকার সেতুর জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ৯০ কোটি টাকা করে। জিপিটি নামের একটি নির্মাণ সংস্থা এই বরাত পায়। এই সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮৯ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা। জ্যোতিপ্রিয় মলিক জানিয়েছেন, “সেতু হওয়ার ফলে হাসনাবাদের নদী পারাপারে যুক্ত মাঝি–মাল্লারা কাজ হারাবেন। তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য এই এলাকায় যে সব কর্মতীর্থ তৈরি হচ্ছে সেখানে মাঝি–মাল্লাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে”।