বুধবার ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান গ্রেফতার হয়েছিলেন পাক সেনাদের হাতে। তাঁর মিগ-২১ গুলি করে নামিয়েছিল পাক সেনা। তার পরেই পাক গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে সামনে আসে অভিনন্দনের ভিডিও। যা দেখে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন অভিনন্দনের বাবা তথা প্রাক্তন এয়ার মার্শাল এস বর্তমান। পাকিস্তানি সেনার হাতে ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পর বিনিদ্র রাত কেটেছে। কখন কী খবর আসে, এই উৎকণ্ঠায় টিভির দিকে চেয়ে বসেছিল পুরো পরিবার।
অবশেষে কূটনৈতিক চাপের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত অভিনন্দনকে শুক্রবার ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিন্তু সেই খবর তখনও জানতেন না অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল। ইসলামবাদের ওই ঘোষণার আগেই অভিনন্দনের ‘গর্বিত’ বাবা ছেলেকে একজন প্রকৃত সৈনিক বলেন। সাংবাদিকদের মাধ্যমে এস বর্তমান দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের উদ্বেগ এবং শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ। ভগবানের অশেষ আশীর্বাদ। অভিনন্দন জীবিত আছে। অক্ষত আছে। যেভাবে ও কথা বলছে, তা একজন প্রকৃত সৈনিকই পারে। তাঁর কথায়, ‘অভি সত্যিই একজন সাহসী সৈনিক। ছেলের জন্য গর্ব হচ্ছে৷’ একইসঙ্গে তিনি এ-ও বলেন, ‘এখন তার নিরাপদে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। আশা করছি, ওর ওপর কোনও অত্যাচার হবে না।’
কঠিন সময়ে স্নায়ুর চাপ ধরে রাখার অভিজ্ঞতা বর্তমান পরিবারের এই প্রথম নয়। এস নর্তমান নিজেও বায়ুসেনার আধিকারিক ছিলেন। তিনি কার্গিল যুদ্ধের সময় দেশের সেবা করেছেন। অভিনন্দনের দাদু সিমহাকুট্টিও বায়ুসেনার পাইলট হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। বুধবার সকালে বালাকোটের পাল্টা ভারতীয় সীমানায় ঢুকে অভিযান চালানোর চেষ্টা করলে পাকিস্তানের জেটকে ধাওয়া করে অভিনন্দনের মিগ-২১। সীমা অতিক্রম করায় তাঁকে গুলি করে নামায় পাক সেনা। অভিনন্দন বর্তমানকে গ্রেফতআরের প্রমাণ হিসেবে তিনটি ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তান।
প্রথমটিতে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় পিছমোড়া করে বাঁধা অভিনন্দন নিজের পরিচয় জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি ভারতীয় বায়ুসেনার অফিসার। সার্ভিস নম্বর ২৭৯৮১। এই ভিডিও নিয়ে প্রবল সমালোচনা শুরু হওয়ায় ফের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সেই ভিডিওতে চায়ের কাপ হাতে বসে আছেন অভিনন্দন। তাঁর চোখ-মুখ ফুলে গিয়েছে। চা পান করতে করতে তিনি পাকিস্তানি সেনার আতিথেয়তার প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে জানান, তিনি দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা এবং বিবাহিত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা তাঁর খুব যত্ন করছেন।
অভিন্দনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে পাক সেনার হাতে বন্দি হওয়া গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামবামপতি নচিকেতা। রাওয়ালপিন্ডিতে আট দিন বন্দি থাকার পর কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে মুক্তি পান নচিকেতা। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিমান সংস্থায় কর্মরত। তিনি উইং কমান্ডার অভিনন্দনের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, দেশের প্রতি কর্তব্য পালনের সময় বিপদে পড়েছেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন। তাঁর সঙ্গে একজন অফিসারের মতো ব্যবহার করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, জেনিভা সম্মেলনের চুক্তি অনুযায়ী, অক্ষত অবস্থায় অভিনন্দনকে ফেরাতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান। অভিনন্দন একজন অত্যন্ত সাহসী পাইলট। ভারতীয় বায়ুসেনার একজন দক্ষ পাইলট হিসেবে উচ্চমানের পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন তিনি। যখন পাকিস্তানি সেনার হাতে অভিনন্দনের গ্রেপ্তারির খবর পাই, অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ি। যদিও আমি নিশ্চিত, অভিনন্দন দ্রুত ফিরে এসে ডিউটিতে যোগ দেবেন।
উল্লেখ্য, প্রকাশিতি ভিডিওগুলিতে চরম বিপদের মুখেও পাক সেনাদের সঙ্গে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায়, সৌজন্যের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় অভিনন্দনকে। সব রকম প্রয়োজনীয় সহায়তা করার পরে, অন্য কিছু প্রশ্নে তাঁকেই বলতে শোনা যায়, ‘সরি স্যার, আই অ্যাম নট সাপোজড টু টেল ইউ দ্যাট।’ অভিনন্দনের এই স্থিরতা, দৃঢ়তা, সংযম ও সৌজন্যতাবোধই বিস্মিত করেছে সকলকে।