অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে সেজে উঠছিল বাংলাদেশ। ঠিক এমন সময়ই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজধানী ঢাকা। বুধবার রাতে পুরনো ঢাকার চকবাজার এলাকায় একটি বহুতলে ভয়াবহ আগুনে প্রাণ গেল বহু মানুষের। আবাসনের নিচে রাসায়নিক মজুত রাখার গুদাম থাকায় আগুন বিরাট আকার নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে পাশের বহুতলগুলিতে।
বৃহস্পতিবার সকাল অবধি আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে দমকল সূত্রে খবর। প্রাথমিক ভাবে ৬০ জনের মৃত্যুর খবর মিললেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ৮০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বহু। পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন ৪৫ জন। তাঁদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ আচমকাই বিকট বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে চকবাজারের ঘিঞ্জি এলাকা। দাউদাউ করে জ্বলতে দেখা যায় একটি বহুতলকে। এরপর নিমেষের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরও কয়েকটি আবাসনে। বহুতলের জানলা, বারান্দা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করতে থাকেন মানুষজন। খবর পেয়ে প্রথমেই ঘটনাস্থলে যায় দমকলের ১২টি ইঞ্জিন। পরে ছুটে যায় আরও কয়েকটি ইঞ্জিন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করেন প্রায় ২০০ জন দমকল কর্মী। ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকল ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা।
দমকলের প্রাথমিক অনুমান, সিলিন্ডার ফেটেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওই বহুতলের নীচের তলায় ছিল একটি রাসায়নিকের গুদাম, যাতে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক জাতীয় সামগ্রী মজুত ছিল। গুদামের পাশেই ছিল পারফিউম তৈরির কারখানা। তাই আগুন এত ভয়াবহ চেহারা নেয় বলে মনে করা হচ্ছে। ওই এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি ও দোকানও সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করে টুইট করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডেপুটি কমিশনার ইব্রাহিম খান জানিয়েছেন, ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি রাসায়নিক গুদাম রয়েছে। সেখানে অগ্নিনির্বাপনের কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। আগুন এতটাই মারাত্মক আকার নেয় যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি গাড়ি ও ১০টি রিকশাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আগুনে। বাংলাদেশ দমকল বিভাগের প্রধান আলি আহমেদ বলেছেন, ‘উদ্ধারকাজ চলছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, তবে গুদামগুলির ভিতরে মাঝে মাঝেই জ্বলে উঠছে আগুন। ঘটনাস্থলে রয়েছেন দমকলকর্মীরা। দরকার হলে আরও ইঞ্জিন পাঠানো হবে।’
এলাকারই একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করেন সোহাগ হোসেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে আমরা কাজ করছিলাম। আচমকাই বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ পাই। বাইরে বেরিয়ে দেখি পাশেরই একটি আবাসনে আগুন লেগে গেছে। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে পুরো এলাকা। আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশের আরও কয়েকটি বাড়িতে। লোকজন বাঁচার জন্য চিৎকার করছিল, অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারেনি।’