এক মাস আগেই চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা৷ তবে এটাই শেষবার। চতুর্থবারের পর আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান না শেখ হাসিনা। নতুন প্রজন্মকে জায়গা করে দিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি।
অবসর নেওয়ার পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিজের পৈতৃক ভিটেতেই বাকি জীবনটা কাটাতে চান বলে গত মঙ্গলবারই গাজিপুরে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে জানিয়ে ছিলেন হাসিনা। এবার ডয়চে ভেল নামের এক জার্মান সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘এটা নিয়ে আমি চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। আমি আর থাকতে চাই না। আমার মনে হয় একটা সময়ে এসে প্রত্যেকেরই ছুটি নেওয়া প্রয়োজন, যাতে নতুন প্রজন্মকে জায়গা করে দেওয়া যায়।’
উল্লেখ্য, গত বছর ডিসেম্বর মাসে একাদশতম জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগ ও তার জোট। ৯৬ শতাংশ আসনে জয়ী হয়েছে তারা। হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের আজ জিডিপি ৭.৮ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতির হার ৬ শতাংশের নীচে। বিদেশি বিনিয়োগও আসছে। কিন্তু এরপরও বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও বাংলাদেশের প্রতি চারজনের একজন গরিব।
চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাই দারিদ্র্য দূরীকরণকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন হাসিনা। খাদ্যসুরক্ষা, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, কর্মসংস্থানের মতো মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণের লক্ষ্যেই কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি। নারী শিক্ষার বিকাশেও যে তিনি চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি সেই দাবিও করেছেন মুজিব-কন্যা। সাক্ষাৎরে হাসিনা আরও বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষই আরও ভালোভাবে বাঁচতে চায়। আমাদের তা নিশ্চিত করতে হবে।’ মুক্ত চিন্তাকে তিনি সমর্থন করেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা সমস্যার প্রসঙ্গও উঠে এসেছিল। রোহিঙ্গাদের জন্য আপাতত একটি দ্বীপে ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা দ্বীপ বেছে নিয়েছি৷ সেখানে আমরা বাঁধ দিয়েছি৷ সাইক্লোন শেল্টার ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছি৷ আমরা তাদের সেখানে নিয়ে যেতে চাই এবং কাজ দিতে চাই৷ তাহলে তরুণ-তরুণীরা অর্থ উপার্জন করতে পারবে৷’ তাঁর মতে, এতে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের জায়গা ও কাজ কেড়ে নিচ্ছে এই অভিযোগ প্রশমিত হবে।
তবে রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত যাওয়াই এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বলে মনে করেন হাসিনা। তাঁর দাবি, মায়ানমারের সঙ্গে কোনও বিবাদে না গিয়েই এই সমাধান চায় বাংলাদেশ। তিনি জানান, ‘আমরা মায়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না৷ আমাদের মধ্যে একটা চুক্তিও হয়েছে৷ মায়ানমারের সঙ্গে যে পাঁচটি দেশের বর্ডার আছে, সেই চীন, বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড ও লাওসের সঙ্গেও আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি যে, কীভাবে এই সমস্যা সমাধানে তাদের কাজ করা উচিত৷’